ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের সময় ৬ মাস বাড়ানোর সংবাদে গতকাল রোববার (১০ মার্চ) দেশের শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও তা টেকসই হয়নি। এক কার্যদিবস পরেই আজ সোমবার (১১ মার্চ) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকে পতন হয়েছে।
Advertisement
সূচক পতনের মধ্যে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়লেও সিএসই কমেছে। তবে সূচকের সঙ্গে দুই বাজারেই পতনের খাতায় নাম লিখিয়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
ডিএসইতে এ দিন লেনদেনে অংশ নেয়া ১০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বৃদ্ধির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯৯টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির শেয়ারের দাম।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতনের প্রভাবে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুটি মূল্য সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩০৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৯৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
Advertisement
ব্যাংকের অতিরিক্ত এডিআর সমন্বয় নিয়ে শেয়ারবাজারে আতঙ্ক দেখা দেয়ার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনা জারি করে এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা ৬ মাস বাড়িয়ে দেয়া হয়। এডিআর সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর নির্দেশনা আসার পরের কার্যদিবসে রোববার (১০ মার্চ) শেয়ারবাজার বড় উত্থানের দেখা দেয়।
তবে এডিআর সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, বারবার সময় না বাড়িয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত। তা না হলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কার্যকারিতা থাকে না।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এডিআর ৮৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮৩ শতাংশ করলে শেয়ারবাজারে তারল্য খুব একটা কমতি হবে না।
তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের বড় সমস্যা সঞ্চয়পত্রের সুদ হার বেশি থাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরাপদ। একদিকে ঝুঁকি নেই, অন্যদিকে সুদ হার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়ছে।
Advertisement
এদিকে মূল্য সূচক ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও সোমবার (১১ মার্চ) ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫০৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৬২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৪৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে এদিন ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের ১৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- সিঙ্গার বাংলাদেশ, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, ফরচুন সুজ, নূরানী ডাইং, ন্যাশনাল পলিমার, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস এবং এসকে ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রিজ।
দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএসসিএক্স ৫ পয়েন্ট কমে ১০ হাজার ৫৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লেনদেন হওয়া ২৪৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪২টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টি শেয়ারের।
এমএএস/আরএস/জেআইএম