অর্থনীতি

সঞ্চয়পত্র : সাত মাসেই লক্ষ্যের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ

ব্যাংক আমানতের সুদের চেয়ে এখনও দ্বিগুণ মুনাফা মিলছে সঞ্চয়পত্রে। ফলে বিত্তশালী থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবাই ঝুঁকছেন এর প্রতি। এতে করে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, তা ছাড়িয়েছে সাত মাসেই।

Advertisement

জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের সর্বশেষ হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকার চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১২ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল। এর মধ্যে জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ঋণ এসেছে ৩০ হাজার ৯৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ১১৮ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ মাস আগেই ৪ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরাপদ। একদিকে ঝুঁকি নেই, অন্যদিকে সুদ হার বেশি হওয়ায় এতে বেশি বিনিয়োগ হচ্ছে।

Advertisement

সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয়সহ এ ঋণ গ্রহণ ও অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে এ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারের বড় বিনিয়োগকারী বেশি লাভের আশায় কৌশলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে, এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই সঙ্গে ঋণের এ অর্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তা না হলে এই ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্দিষ্ট হারে সরকারকে সুদ প্রদান করতে হয়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সঞ্চয়স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ আসে ৬ হাজার ৩ কোটি টাকা। আর আগের সময়ে (জুলাই-জানুয়ারি) কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সুদ বাবদই পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ হাজার ১১১ কোটি টাকা।

এখাত সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় সঞ্চয়স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপুর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেয়া হয়। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নেট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নেট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এদিকে সঞ্চয়পত্রে জনসাধারণের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে মুদ্রাবাজারে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের মতে, সুদহার বেশি হওয়ায় সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের বড় অংশই আসছে এ খাত থেকে। এতে বাজারে সুদহার কমানো যেমন সহজ হচ্ছে না, তেমনি সরকারের বেশি সুদবাহী দায় বাড়ছে। অন্যদিকে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য জমছে, যা সামলাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিল বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে পরিচালন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার যৌক্তিকীকরণে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে।

সঞ্চয়পত্রে সুদের হার পুনর্নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ ও ব্যাংক পরিচালকসহ বিভিন্ন মহলের চাপ সত্ত্বেও এখনও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিন্ধান্ত নেয়নি সরকার।

Advertisement

তবে সঞ্চয়পত্রের কালো টাকা এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধ করতে কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর। সঞ্চয়পত্র বিক্রির কার্যক্রমে পরিক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে অটোমেশন (অনলাইন) পদ্ধতি।

জানা গেছে, অটোমেশনে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গে লিংক রয়েছে। তাই কেউ সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কিনছে কিনা সেটি সহজেই ধরা পড়বে। একইসঙ্গে সঞ্চয়পত্রে কালো টাকার বিনিয়োগ রোধে ৫০ হাজার টাকার বেশি কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে তাকে চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে হবে।

প্রাথমিকভাবে এ অটোমেশন (অনলাইন) পদ্ধতি চালু হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখা, সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখা, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের ব্যুরো অফিস (গুলিস্তান) এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের প্রধান কার্যালয়ে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এই হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

এসআই/এমএমজেড/এমকেএইচ