হ্যামিল্টন টেস্টের দুই ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম ইকবাল। ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আর পারলেন না তামিম, আউট হয়েছেন মাত্র ৪ রান করে।
Advertisement
দলের সেরা ব্যাটসম্যান মাত্র ৪ রানে ফিরলে পরের ব্যাটসম্যানদের কাজটা কঠিন হয়ে যায় বহুগুণে। যে কারণে হ্যামিল্টনের মতো ওয়েলিংটনেও চোখ রাঙাচ্ছে ইনিংস পরাজয়।
ম্যাচের চতুর্থ দিনশেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৮০ রান। নিউজিল্যান্ডের ২২১ রানের লিড পেরিয়ে ইনিংস পরাজয় ঠেকাতে এখনো প্রয়োজন ১৪১ রান, হাতে রয়েছে ৭ উইকেট। সৌম্য সরকার ১২ এবং মোহাম্মদ মিঠুন অপরাজিত রয়েছেন ২৫ রানে।
স্বাগতিকরা ৪৩২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করলে বাংলাদেশের সামনে ইনিংস পরাজয় এড়ানোর লক্ষ্য দাঁড়ায় ২২১ রানের। সে লক্ষ্যে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেন তামিম ইকবাল। কিন্তু পরের বলেই তার মিডল স্টাম্প ছত্রখান করে দেন ট্রেন্ট বোল্ট।
Advertisement
বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি পুরো সিরিজেই অফফর্মে থাকা মুমিনুল হক। থার্ড স্লিপে দাঁড়ানো টিম সাউদির হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি করেন ১০ রান। তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধের আশা জাগান মোহাম্মদ মিঠুন এবং সাদমান ইসলাম।
দুজন মিলে গড়েন ৩৫ রানের জুটি। পুরো সিরিজেই ভালো শুরুর পর নিজের উইকেট হারানোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন তরুণ ওপেনার সাদমান। দলীয় ৫৫ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২৯ রানে ফেরেন তিনি। পরে শেষ বিকেলের আধঘণ্টা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন মিঠুন এবং সৌম্য।
এর আগে তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলটা বাংলাদেশের জন্য ছিল দারুণ আশা জাগানিয়া। মাত্র ৮ রানের মধ্যেই দুই কিউই ওপেনারকে সাজঘরের টিকিট ধরিয়েছিলেন আবু জায়েদ রাহী। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১১.৪ ওভারে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের বেশ কঠিন পরীক্ষার নিয়েছিলেন ইবাদত হোসেনও।
আশা ছিল চতুর্থ দিন সকালে দ্রুত উইকেট তুলে নিতে পারলে হয়তো মিলবে স্বস্তির হাসি। কিন্তু কিসের কি! সোমবার দিনের শুরু থেকেই একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে স্বাগতিকতরা। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের ফিফটি, তরুণ হেনরি নিকলসের সেঞ্চুরি এবং অভিজ্ঞ রস টেলরের ডাবল সেঞ্চুরিতে প্রায় সাড়ে চারশ রান করেছে স্বাগতিকরা।
Advertisement
অথচ দিনের মাত্র তৃতীয় ওভারেই ব্রেকথ্রু পেতে পারতো বাংলাদেশ। মাত্র দুই বলের ব্যবধানে দুইবার জীবন পান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রস টেলর। যার মাশুল গুনতে হয়েছে টাইগারদের।
আবু জায়েদ রাহীর করা ইনিংসের ১৫তম ওভারের প্রথম বলে শর্ট কভারে দাঁড়িয়ে হাতের ক্যাচ ছেড়ে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এক বল পরই স্লিপে দাঁড়িয়ে টেলরকে জীবন দেন তরুণ সাদমান ইসলাম অনিক। তখন মাত্র ২০ রানে খেলছিলেন টেলর। তিন বলের ব্যবধানে জোড়া জীবন পেয়ে টাইগারদের বেশ ভুগিয়েছেন ডানহাতি এ মিডল অর্ডার ব্যাটসমান।
টেলর জীবন পেলেও সলিড ছিলেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে গড়েন ১৭২ রানের জুটি। ইনিংসের ৪০তম তাইজুল ইসলামের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরত যান উইলিয়ামসন। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও তিনি ফেরেন ৭৪ রান করে।
তবে নিজের ক্যারিয়ারের ১৮তম সেঞ্চুরি করতে কোনো ভুল করেননি টেলর। মাত্র ৯৭ বলে করা সেঞ্চুরিতে ১৪টি চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা হাঁকান টেলর। সঙ্গী হিসেবে এসে যান হেনরি নিকলস। তিনিও তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি।
নিকলস-টেলর জুটিতে আসে ইনিংস সর্বোচ্চ ২১৬ রান। দলীয় ৪০০ রান পূরণ হওয়ার ৪ রান বাকি থাকতে তাইজুল ইসলামের বলে বোল্ড হন নিকলস। তখনো দুইশ হয়নি টেলরের। খানিকপরেই এ মাইলফলকের পৌঁছে যান তিনি।
ইনিংসের ৮৪তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন টেলর। ঠিক ২০০ রানেই থামে টেলরের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসটি।
সপ্তম উইকেট জুটিটা ২ ওভারের বেশি লম্বা হতে দেননি আবু জায়েদ রাহী। ইনিংসের ৮৫তম ওভারের শেষ বলে ওয়াটলিংকে ফিরিয়ে দেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ইনিংস ঘোষণা করেন কিউই অধিনায়ক। ৬ উইকেটে ৪৩২ রানে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস।
এসএএস/এমকেএইচ