ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজুর রহমান হলে রাত জেগে পড়াশনা করায় সাধারণত ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন না। কিন্তু আজ সোমবার কাকডাকা ভোরে ঘুম ভেঙেছে তার। ঘুম থেকে উঠে দেখেন আরও কয়েকজন সহপাঠীও উঠে গেছে। কেউ কেউ পোশাক পরে বাইরে যেতে প্রস্তুুতি নিচ্ছেন।
Advertisement
মিনহাজ ও তার বন্ধুদের নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে এত সকালে ঘুম থেকে ওঠার কারণ সুদীর্ঘ ২৮ বছর পর বহুল আকাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন। ভোরের আলো ফোটার আগ থেকেই ক্যাম্পাসে ও বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থীদের ভোট উৎসবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।
আজ তাদের ভোটেই কেন্দ্রীয় ডাকসু ও হল সংসদের নেতা নির্বাচন অর্থাৎ ঢাবি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির নতুন ধারার সূচনা হবে।
সুদীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৪২ হাজার ৯২৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৭৭২ এবং ছাত্রী ১৬ হাজার ১৪৫। ডাকসুর ২৫টি পদ ও হল সংসদের ১৩টি পদসহ মোট ৩৮টি পদে ভোট দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন।
Advertisement
হলভিত্তিক পাঁচটি ছাত্রী হলের মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে রোকেয়া হলে ৪ হাজার ৫৩০, শামসুন্নাহার হলে ৩ হাজার ৭৩৭, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩৭১০, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ১ হাজার ৯২০ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২ হাজার ২৪৮ জন।
নির্বাচন উপলক্ষে আজ ভোর ছয়টায় ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশপথ ও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। প্রবেশপথগুলোতে পুলিশ সদস্যরা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সরবরাহকৃত কার্ডধারীদেরকে ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। বিভিন্ন হলে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভোট উৎসবে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।
দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচনে মোট ৪২ হাজার ৯২৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটারদের মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৭৭২ জন এবং ছাত্রী ১৬ হাজার ১৪৫ জন।
ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদ ও হল সংসদের ১৩টিসহ মোট ৩৮টি পদে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য ভোট দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ভোটগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে মোট ৫০৮টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
Advertisement
কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের বিপরীতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ২২৯ জন প্রার্থী। আর ১৮টি হল সংসদে ১৩টি পদের জন্য ৫০৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ডাকসুর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুয়ায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ২১ জন এবং জিএস পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ছাড়া এজিএস পদে ১৩ জন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম-ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন এবং ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে ৮৬ জন নির্বাচন করবেন।
অন্যদিকে হল সংসদে ১৮টি হলে ১৩টি করে পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন মোট ৫০৯ জন। এর মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ২৭ জন, জগন্নাথ হলে ২৮ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলে ১৭ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ২৬ জন, অমর একুশে হলে ২৯ জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৭ জন, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ৩৪ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৩৩ জন, রোকেয়া হরে ৩০ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩০ জন, শামসুন্নাহার হলে ২৫ জন, কবি জসীম উদ্দীন হলে ২৫ জন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ২২ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৬ জন, বিজয় একাত্তর হলে ৩০ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২৭ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ৩৭ জন এবং সূর্যসেন হলে ২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর আগে সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন ডাকসু নির্বাচন হয়। এরপর ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাত বছরে তিনবার তফসিল ঘোষণা করা হয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। ১৯৯৮ সালে ডাকসুর কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। ওই সময় পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
দেশের দ্বিতীয় সংসদ হিসেবে খ্যাত ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ মিছিল, ধর্মঘট, মানববন্ধন, কালো পতাকা মিছিল, অনশন এমনকি উচ্চ আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়ায়।
২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থীর করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে আদেশ দেন। পরের মাসে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেয়, ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে এই নির্বাচন হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১১ মার্চ এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
এমইউ/এসআর/এমবিআর/এমকেএইচ