রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমান। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করে জোগান দিতে হচ্ছে। রফতানি যে হারে বেড়েছে, আমদানি তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। ফলে রেমিট্যান্সের কিছুটা ইতিবাচক পরিস্থিতি সত্ত্বেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। যার কারণে ডলারের চাপ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাস শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ২ হাজার ৩৮০ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৩ হাজার ৩৪৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সেই হিসেবে জানুয়ারি শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৬৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা দরে) ৮১ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব (-) ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ (-) ঋণাত্মক কিছুটা কমেছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৩৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫৪০ কোটি ২০ লাখ ডলার।
Advertisement
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভাল।
এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৫৯২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৩৯৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৯৪ কোটি ডলার; যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ২০১ কোটি ডলার।
প্রথম সাত মাসে প্রবাসীদের আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে ৯০৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৮৩১ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি নিট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ১০৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। এদিকে আলোচিত সময়ে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৩০ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
Advertisement
এদিকে দেশের বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার এ সংকট মেটাতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগের (২০১৭-১৮) অর্থবছরে বিক্রি করেছিল ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরে চার দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছর শুরুর দিন আন্তব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। দু’দিন পর ৩ জানুয়ারি ডলারের দাম ৫ পয়সা এবং ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ পয়সা দাম বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি ৭ পয়সা বেড়ে ডলারের দাম দাঁড়ায় ৮৪ টাকা ১২ পয়সা। এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ১৫ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
এসআই/এনএফ/জেআইএম