জাতীয়

নির্যাতিত নারী নয়, ধর্ষকের নাম-পরিচয় প্রচার করুন

যারা নারী ও শিশু ধর্ষণ করে তারা সমাজের চেখে অপরাধী। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে নেয়া কঠোর আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের নাম-পরিচয়, চেহারা ভালোভাবে প্রচার করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খবরের কাগজে প্রায়ই দেখি শিশু ধর্ষণ, নারী ধর্ষণ, এটা অত্যন্ত গর্হিত একটা কাজ। যারা এসব করে তারা সমাজের শত্রু। সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত ধর্ষককে ঘৃণা করা।

Advertisement

শনিবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৯ উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিবারের মতো এবারও ৮ মার্চ সারাবিশ্বে দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী। অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠ করেন নারীরা।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন্নাহার। স্বাগত বক্তব্যের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে ‘জয়িতা’ পদকপ্রাপ্তদের হাতে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন।

Advertisement

আরও পড়ুন >> নারী-পুরুষ সমন্বয়ে কাজ করলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আরও বেশি সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলব যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের নাম-ধাম, চেহারা ভালোভাবে প্রচার করা। নির্যাতিত নারীদের নয়, যে ধর্ষক তার পরিচয়, চেহারা এমনভাবে প্রচার করা যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যেন তাকে ঘৃণার চোখে দেখে এবং এই ভাবে তাকে সমাজের বাইরে করে দেয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আইনগত ব্যবস্থা তো তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবেই। আপনারা জানেন ইতোমধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারপরও এর বিরুদ্ধে আরও বেশি সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টি করা দরকার।

কন্যাশিশুরা যেন কখনো বৈষম্যের শিকার না হয় এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কন্যাশিশুরা যেন কখনো বৈষম্যের শিকার না হয়। সেই সচেতনতা ইতোমধ্যে আমাদের সমাজে এসে গেছে। এটা আরও ভালোভাবে প্রচার দরকার।

Advertisement

সমাজ গঠনে নারী-পুরুষের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজকে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষ সবারই একসঙ্গে কাজ করা দরকার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন- বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।

আরও পড়ুন >> অ্যাওয়ার্ড বিশ্বের নির্যাতিত নারীদের উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয়, সেই সমাজের অর্ধেক যেখানে নারী, তাদের বাদ রেখে একটা সমাজ কখনো গড়ে উঠতে পারে না।

সরকার কঠোর শাস্তির বিধান রেখে ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩, ও ডিএনএ আইন-২০১৪, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এবং যৌতুক নিরোধ আইন- ২০১৮ প্রণয়ন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০৩ (সংশোধিত) ও পারিবারিক পর্যায়ে সংঘটিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৬৭টি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করাসহ নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, শুধু আইন করলে সহিংসতা বৈষম্য দূর হবে না। এ জন্য সমাজের সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে দরকার। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সমাজের অর্ধেক যেখানে নারী, তাদের বাদ রেখে একটা সমাজ কখনও গড়ে উঠতে পারে না। সে ক্ষেত্রে সকলকে একহয়ে কাজ করা সব থেকে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

এফএইচএস/বিএ/এমকেএইচ