জাতীয়

অশ্লীল ছবির ফাঁদ, টার্গেট বিত্তশালী

প্রথমে নগরের অভিজাত এলাকায় বাসাভাড়া। পরে নারী সদস্যদের দিয়ে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও বিত্তশালীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলা। বাসায় ডেকে এনে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া।

Advertisement

গতকাল শুক্রবার এমনই একটি প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এ দলে দুজন নারী সদস্যও রয়েছেন।

তারা হলেন- দিদারুল ইসলাম প্রকাশ দিদার (৩৫), ফাতেমা ইয়াছমিন নিশি (২৮), বিথিত মাহমুদ মোস্তাফা সিফা (২৩), আনোয়ার হোসেন আনু (৪৪) ও রাকিব আল ইমরান (২৬)।

শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

Advertisement

তিনি বলেন, নগরে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি চক্র নারীদের ব্যবহার করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করে আসছিল। এর মধ্যে একটি চক্রের পাঁচজনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। গতকাল দিনভর পাঁচলাইশ, হালিশহর ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

‘তাদের কৌশল ছিল, দলের নারী সদস্যদের দিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলা এবং পরে বাসায় ডেকে এনে অশ্লীল ছবি ও ফুটেজ ধারণ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া। ওই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ইতোমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ব্যক্তি লাখ লাখ টাকা হারিয়েছেন।’

উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাভাড়া নেন তারা। তাদের বাসার ড্রইং রুমে হালকা আসবাবপত্র থাকলেও বাকি রুমগুলোতে কোনো কিছু থাকে না। তাই বাসাভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালারা সতর্ক থাকলে এবং পুলিশের সহযোগিতা নিলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২ মার্চ রাত ১০টার দিকে কাজীর দেউড়ি এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে ইমরান নামের এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চোখ বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাঁচলাইশ থানাধীন চশমা হিল এলাকার একটি বাসায় নেয়া হয় তাকে।

Advertisement

‘সেখানে দুই নারীর সঙ্গে জোর করে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তোলা হয়। এসব ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে এবং প্রাণে মেরে ফেলা হবে- এমন ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়। বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ৩ মার্চ বিকেল ৫টার দিকে ছাড়া পান ইমরান।’

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘অপহৃত ব্যবসায়ী ইমরানের ভাই আলাদা তিনটি বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন অংকে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা অপহরকারী চক্রটিকে পাঠান। এর মধ্যে একটি মোবাইল নম্বর সন্দ্বীপ উপজেলার একটি ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকানের, অপর দুটি গ্রেফতার দুই আসামি দিদার ও নিশির। সেই সূত্র ও আমাদের ক্রিমিনাল ডাটাবেজ ব্যবহার করে পাঁচলাইশ, হালিশহর ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, দলনেতা দিদারের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে পাহাড়তলী থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। এছাড়া নিশির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ইপিজেড থানায় একটি মামলা আছে। আনোয়ারের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে বায়েজিদ থানায় মাদক আইনে একটি, ২০১২ সালে কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র আইনে এবং ২০১৫ সালে বায়েজিদ থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়।

আবু আজাদ/এমএআর/এমকেএইচ