বঙ্গবন্ধু খুবই দূরদর্শী নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে বঙ্গবন্ধু যা যা বলেছিলেন পাকিস্তানিরা তাই করেছে। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের আগে বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে আমরা জয়ী হব, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাব। কিন্তু পাকিস্তানিরা আমাদেরকে ক্ষমতা দেবে না।’ শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কথাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছিল।
Advertisement
আজ (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীর ফামগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর আয়োজিত সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এই সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান।
Advertisement
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী মাসুদা হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ছয় দফা দেয়ার পর এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান। অক্টোবরে তিনি লন্ডন যান। আমিও তখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লন্ডনে থাকি। আমাদের প্রবাসী বাঙালিরা কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে বিশাল ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি একটা গেরিলা যুদ্ধ করতে গেলে অস্ত্র কোথা থেকে আসবে? ট্রেনিং কোথায় হবে? কীভাবে বিশ্বের সমর্থন আদায় করা যেতে পারে- বঙ্গবন্ধু কিন্তু সেসব পরিকল্পনা লন্ডনে বসেই করেছিলেন। এই পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি ছিল। তার ভিতরে অদ্ভুত একটা দূরদর্শী শক্তি ছিল। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন হবে, আমরা জয়ী হব, কিন্তু ওরা আমাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। এ জন্য যুদ্ধ করতে হবে, যুদ্ধ করেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এ কথাগুলো আমাদের সঙ্গে বলতেন, বাইরে কোনো লোকের কাছে এ ধরনের কথা বলতেন না। আমরা এতটুকু জানলেও এগুলো প্রকাশ করার কোনো অধিকার ছিল না। এখন সময় হয়েছে বলে, ইতিহাসের জন্য এ কথাগুলো বলি। তিনি যা যা বলেছিলেন সেই ঘটনাগুলো ঘটল। অর্থাৎ তিনি পাকিস্তানের শাসকদের খুব ভালোভাবেই চিনতেন। পূর্ববঙ্গে উনি যে দুটো সিট হারাবেন সে কথাও বলেছিলেন। ফলাফল বের হওয়ার পর সেটা সত্য হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ বাজানো হয় এটা সংক্ষিপ্ত। মূল ভাষণ ছিল ২২ থেকে ২৩ মিনিট। কিন্তু এটা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯ মিনিট। এটা রেকর্ড করেছিলেন খায়ের সাহেব। ৭০ সালে মুকসুদপুর থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
Advertisement
তার রেকর্ডিং কোম্পানি ছিল। তিনি এটার রেকর্ড প্রথম বের করেন। যখন গণহত্যা শুরু হয় তখন এই সব রেকর্ড নিয়ে তিনি চলে যান ভারতে। খায়ের সাহেব হলেন আমাদের রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শাকিলের বাবা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ভাষণটা কিন্তু রঙিন ছিল না। প্রথম রঙিন করা হয় সিআরআইয়ের মাধ্যমে। যা মানুষকে আরও আকৃষ্ট করে। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সমস্ত দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কী কী করতে হবে- তার সবই তিনি বলেছিলেন। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। তিনি জানতেন যে এ ভাষণের পর তিনি নাও বেঁচে থাকতে পারেন। তাকে মেরে ফেলতে পারে। সে চেষ্টাও করা হয়েছে। এ কারণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তাহলে…।’ একটা যুদ্ধের জন্য কী করণীয় তা তিনি বলে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সালে যে উনি ইলেকশন করেছিলেন তখন অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ইলেকশনটা হতে হবে এই কারণে যে বাঙালি জাতির পক্ষে কথা বলবেন। একজন প্রতিনিধি থাকতে হবে, কে নেতা সেটা আগে ঠিক করতে হবে। তাহলে আন্দোলন করার অধিকার থাকবে। জনগণের ম্যান্ডেট হাতে থাকলে সেটা আলাদা একটা শক্তি। সেই জন্য তিনি ইলেকশনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ইয়াহিয়া যে সকল শর্ত দিয়েছিলেন তিনি সেগুলো মেনে ইলেকশন করেন এবং জনগণের ম্যান্ডেট হাতে নেন। যে কারণে বিশ্বও সমর্থন দিয়েছে।
এফএইচএস/এমএমজেড/এমকেএইচ