দেশজুড়ে

আলো সন্ধানী নারীদের পাশে দিলয়ারা

সমাজের নিরক্ষর নারীদের জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মেহেরপুর গাংনীর বাঁশবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দিলয়ারা আফরোজ। বই খাতাসহ আনুসঙ্গিক জিনিসও বিনামূল্যে সরবরাহ করছেন তিনি। সুযোগ পেলে নিরক্ষর বয়স্ক পুরুষদের নিয়েও কাজ করতে চান। তার এ মহতি উদ্যোগে স্বাগত জানাচ্ছেন প্রশাসন থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদরাও।

Advertisement

শিক্ষাবিদ রফিকুর রশিদ রিজভী জানান, আঁধারে একদল নারী বই বুকে নিয়ে ছুঁটছেন পাঠশালায়। এই বয়সে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চান তারা। এমনি আলো সন্ধানী নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আফরোজ। বই থেকে শুরু করে সবকিছুই বিনামূল্যে সরবরাহ করছেন তিনি। নারী শিক্ষা এগিয়ে নেয়ার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ।

দিলয়ারা আফরোজ জানান, শুরুটা ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে। ১২ জন নিরক্ষর বয়স্ক নারী নিয়ে নিজ বাড়িতে প্রাক-প্রাথমিকের কার্যক্রম দিয়ে শিক্ষা দান শুরু করেন তিনি। এখন তার পাঠশালায় ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে ১৯। এর মধ্যে ৯ জন ৪র্থ শ্রেণির, ৭ জন তৃতীয় শ্রেণির এবং ৩ জন প্রথম শ্রেণিতে। বয়স্করা শিক্ষার আলো পেয়ে যেন নতুন জীবনে পদার্পণ করেছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘শেষ বিকেলের আলো।’

তিনি জানান, শুধু নিজেই শিক্ষিত না হয়ে সমাজের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ। এরই মাঝেই যেন স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। সুযোগ পেলে নারীদের পাশাপাশি নিরক্ষর পুরুষদের নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। সহযোগিতা পেলে পাঠশালাটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান।

Advertisement

‘শেষ বিকেলের আলো’ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী শাহীদা, মুসলিমা ও রোকেয়া খাতুন জানান, তারা এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে এখন রিডিং পড়তে পারে। কারও সহযোগিতা ছাড়াই নিজে নিজেই ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ফিরোজা ও পারভীন আক্তার জানান, লেখাপড়া শিখে এখন ছেলে-মেয়েদের সহযোগিতা করতে পারছেন। শিশুদের কাছে এখন লজ্জায় পড়তে হয় না। মা কিছু লেখাপড়া পারে না এই কথা শুনতে হয় না আর।

দিলয়ারা আফরোজের স্বামী আলামিন জানান, পরিবারের সব কাজ করে নিরক্ষর নারীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। সব সময় তার পাশে থেকে সহযোগিতার কথা জানালেন তিনি।

গাংনীর নির্বাহী অফিসার বিঞ্চুপদ পাল জানান, নারী শিক্ষা এগিয়ে নেয়ার জন্য এটি অবশ্যই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তিনি নারীদের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসন সবধরনের সহযোগিতা করবে বলে তিনি জানান।

Advertisement

এমআরএম/এমএস