শুধু টাকা খরচ করে ও শাসন করে সন্তানদের মানুষ করা যায় না। পাশাপাশি ভালোবাসাও দিতে হয়। কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার রত্নগর্ভা মা মিনুকা বেগম (৬৫)।
Advertisement
শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের আক্কেল মোহাম্মদ মুন্সীকান্দি গ্রামের মিনুকা বেগম স্বামীর অবর্তমানে নানা প্রতিকূলতার মাঝে তিন সন্তানকে উচ্চশিক্ষত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে বর্তমানে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
কথা হয় এই মহিয়সী নারীর সঙ্গে। তিনি জানান, ১৮ বছর বয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামী মৃত মো. আব্দুর রহমান হাওলাদার ১৯৮০ সালে শরীয়তপুর সদর হাপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি পদে চাকরি নেন। মাত্র ৩ বছর চাকরি করার পর মানসিক রোগে আক্রান্ত হন আব্দুর রহমান। তখন মিনুকা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বামী, সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন মিনুকা। অক্ষর জ্ঞানহীন মিনুকা বেগম কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রত্যেক সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন।
১৯৯৩ সালে মিনুকা বেগম বিধবা হন। শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যেকোনো মূল্যে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। তাই পরিবারের খরচ যোগাতে ১৯৮৩ সালে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়ার কাজ শুরু করেন। কোনো জমি না থাকায় সন্তানদের নিয়ে জাজিরা হাসপাতলেই থাকতেন তিনি। হাসপাতালে ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সহযোগিতায় সন্তানদের লেখাপড়া করানো শুরু করেন। মনের যে বাসনা ছিল তা পূর্ণ করেছেন ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে।
Advertisement
মিনুকা বেগমের বড় ছেলে মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার (৪১) জাজিরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে মো. হুমায়ূন কবীর হাওলাদার (৩৮) রুপালী ব্যাংক ফরিদপুর শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার। আর মেয়ে রুমা আক্তার (৩৭) কুমিল্লা সদর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন।
মিনুকা বেগমের বড় ছেলে মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার জানান, আমরা মাকে অনেক ভালোবাসি। মা আমাদের গর্ব। আমার মায়ের সাহসিকতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে পরিবারে সুখ এসেছে। মায়ের জন্য আজ আমরা প্রতিষ্ঠিত। একসময় থাকার যায়গা-জমি ছিল না। এখন জমি হয়েছে, বাড়ি-গাড়ি হয়েছে। সবই মায়ের অবদান।
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবসে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ এর সফল জননী শরীয়তপুরের শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা স্মারক অর্জন করেন মিনুকা বেগম।
ছগির হোসেন/এফএ/এমএস
Advertisement