বিশেষ প্রতিবেদন

ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে মাঠে সাহসী প্রমীলারা

খাদ্যে ভেজাল, ওজনে কম। সবমিলিয়ে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মিলছে না পণ্য ও সেবা। বাড়তি মুনাফার লোভে এভাবে নানা কৌশলে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী। এ ধরনের অপরাধ দমনে মাঠে কাজ করছেন ৮ সাহসী নারী কর্মকর্তা।

Advertisement

তারা ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত চলছে ভেজালবিরোধী অভিযান। হোটেল রেস্টুরেন্ট, সুপারসপসহ ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অভিযোগ নিষ্পত্তিতেও এসব নারী কর্মকর্তারা সুনাম কুড়িয়েছেন। সংসার সামলেও পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে বৈষম্য দূর করছেন।

এমনই একজন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ। এছাড়াও রয়েছেন অধিদফতরের উপ-পরিচালক নুরজাহার বেগম, সহকারী পরিচালক শাহনাজ সুলতানা, আতিয়া সুলতানা, আফরোজা রহমান, ফাহমিনা আক্তার, রজবী নাহার রজনী, ইন্দ্রানী রয় ও জান্নাতুল ফেরদাউস।

নারীদের চার দেয়ালের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে নিরলস কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শাহীন আরা মমতাজ জাগো নিউজকে বলেন, দুই দশকের বেশি সময় ধরে সরকারি চাকরি করছি। যার বেশিরভাগ সময় কেটেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। গত আড়াই বছরে ধরে প্রেষণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে কাজ করছি।

Advertisement

তিনি বলেন, নারী বলে তো আমি কখনো পিছিয়ে থাকিনি। সব সময় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছি। ভোক্তা অধিদফতরে কাজের সময় সাধারণ গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করায় দেশের শীর্ষ বেসরকারি মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংককে জরিমানা করেছি। এছাড়া ভোক্তার অধিকার ক্ষুণ্ন করায় সিটি গ্রুপ, বেংগল গ্রুপ, বাটা, এপেক্স ও দারাজসহ নামিদামি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে গত আড়াই বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা জরিমানা করেছি। অতি স্বল্প সময়ে ভোক্তাদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনানি করে নিষ্পত্তি করেছি । এতে অধিদপ্তরের প্রতি আস্থা বেড়েছে ভোক্তাদের।

শাহীন আরা মমতাজ বলেন, দুদকে ২২ বছর অনুসন্ধান ও তদন্তমূলক কাজ করেছি। আড়াই বছর কাজ করেছি ডিএনসিআরপিতে। প্রায় ২৫ বছরের কর্মজীবনকে শুধু নারী হিসেবে নয়, একজন কর্মকর্তা হিসেবে চিন্তা করে অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করছি।

কাজের ক্ষেত্রে নারী অফিসার হিসেবে কখনো কারও কাছ থেকে বাধাপ্রাপ্ত হইনি । সবার সহযোগিতা পেয়ে কাজ করে আসছি । আগামীতে এভাবেই আরও কাজ করে যাব- বিশ্ব নারী দিবসে এই হোক আমার প্রত্যাশা ও অঙ্গীকার ।

অধিদফতরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, মাঠে কাজ করা কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে যে নারীরা পিছিয়ে আছে তা নয়। আমরা অনেক দূরে অপারেশনে যায় এ ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। বরং প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা পাই।

Advertisement

তিনি বলেন, অভিযানের সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের লোকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাঝে মাঝে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। তবে যখন আমরা নারীরা অভিযান চালায়, তখন তারা অতোটা ক্ষিপ্ত হতে পারে না। কারণ একজন নারীর সামনে তাদের অপরাধবোধ কাজ করে বেশি।

তিনি আরও বলেন, মেয়েরা গুছিয়ে কাজ করার চেষ্টা করে। অফিসের কাজের ক্ষেত্রেও একটু নিয়ম মেনে করে। যেমন, অভিযোগ শুনানিকালে আমরা যতটুকু সম্ভব ধৈর্য্য নিয়ে শুনি ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেই। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন পুরুষ কর্মকর্তা এতো ধৈর্য্য নিয়ে শোনেন না।

সংসার ও কর্মক্ষেত্র দু'টি একসঙ্গে চালাতে গিয়ে একটু সমস্যা হয়। তবে এটি সমন্বয় করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এটাকে মাথায় রেখেই আমরা নারীরা এগিয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা ভোক্তার অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছি। একজন সাধারণ মানুষ যখন প্রতারিত হয়ে আমাদের কাছে এসে প্রতিকার পায়। এ সময় মানুষের খুশিটা দেখলেই কাজে উৎসাহ পান বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এসআই/এমএসএইচ/এমএস