বিশেষ প্রতিবেদন

নারী ইস্যুতে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের কোনো সমাঝোতা নেই

সেলিমা আহমাদ, এমপি। সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (বিডব্লিউসিসিআই)। ভাইস প্রেসিডেন্ট নিটল-নিলয় গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। পরিচালক, জনতা ব্যাংক। ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে নারীর উন্নয়ন-ক্ষমতায়ন নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন।

Advertisement

ব্যবসায়িক নেতৃত্ব থেকে সংসদ সদস্য হলেন। নারীর অগ্রযাত্রা নিয়ে কী বলবেন?

আমরা এখন এগিয়ে যাওয়ার গল্প করছি। এ গল্পে নারীকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ করা যাবে না। নারী ব্যবসা করছেন, চাকরি করছেন, রাজনীতি করছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রধান নেতৃত্বে নারীরা দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন।

জাতিসংঘ বলছে, নারীর ক্ষমতায়নে অর্থনৈতিক এবং কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সাহসী এবং পরিবর্তনের জন্য অনেকগুলো জায়গায় আমাদের আরও কাজ করা দরকার বলে মনে করি। দেশের অর্থনীতিতে নারীরা এখন বিশেষ অবদান রাখছেন, তা জোর দিয়েই বলতেই পারি।

Advertisement

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের কথা বলছেন। প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্যও হলেন। নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে কী পরিবর্তন এল?

যেকোনো সময়ের থেকে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বাড়ছে বলে আমি বিশ্বাস করি। গবেষণায় এসেছে রাজনৈতিক বৈষম্য যে ৬টি দেশে ৫০ শতাংশ কমে এসেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশে অন্যতম। বাংলাদেশে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, তা তো অস্বীকার করার উপায় নেই।

নারীর ক্ষমতায় বাড়ছে বটে। তবে কর্তৃত্বের প্রশ্নে নারীও নিপীড়কের ভূমিকায় থাকছেন, যা পুরুষতান্ত্রিকেরই নামান্তর।

এটি মানসকিতার ব্যাপার। একজন পুরুষের অধীনস্ত যেমন কেউ থাকতে পারেন, তেমনি একজন নারীর অধীনেও কেউ কাজ করতে পারেন। তাই বলে আর্থ-সামাজিক প্রশ্নে কেউ কাউকে নিপীড়ন করতে পারে না। আর এ মানসকিতা তৈরি হয় পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের ভূমিকায়। সমাজ থেকে বৈষম নিপীড়ন রোধ করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

Advertisement

মানুষে এখন আলোর পরশ পাচ্ছে। এরপরও চরম নির্যাতন হয় নারীর প্রতি। এর জন্য কোন বিষয়কে সামনে আনবেন?

আলোর মধ্যেও অন্ধকার থাকবেই। আইনের প্রয়োগে ঘাটতি আছে বলেই নারী নির্যাতিত হয়। বিচার হয় না, শাস্তি হয় না। একটি ঘটনা চাপা পড়ে আরেকটি ঘটনা দিয়ে। অথচ সঠিক সময়ে বিচার সম্পন্ন হলে আরও দশটি নির্যাতন ঠেকানো যেত।

মুখ থুবড়ে আছে নারী উন্নয়ন নীতিমালা। এখন আর আলোচনাও হয় না। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

নারী নীতিমালা নিয়ে আওয়াজ কমে গেছে। অথচ নারী উন্নয়নে যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, তাদের আরও সরব হওয়ার দরকার ছিল।

সরব না হওয়ার কারণ কী থাকতে পারে?

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। নেতৃত্বের জায়গায় কোনো ঘাটতি আছে কী-না?

নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করছিল হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সমাঝোতা এখন। এটি একটি কারণ হতে পারে কী-না?

আমি ঠিক তা মনে করছি না। নারী ইস্যুতে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের কোনো সমাঝোতা নেই। মূলত যারা নেতৃত্বে থাকার কথা তাদের উচ্চারণ কমে গেছে নারী উন্নয়ন নীতিমালা নিয়ে।

আমি মনে করি তরুণ নেতৃত্বের দরকার। কিন্তু তরুণরা নেতৃত্বে আসছে না।

তরুণ না আসার কারণ কী থাকতে পারে? এর জন্য কী রাষ্ট্র-সমাজের প্রতি তারুণদের হতাশাকে দায়ী করা যায়?

এখানে হতাশার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। তরুণরা কেন যেন দায়িত্ব নিতে চাইছে না। তরুণদের দায়িত্ব নিয়ে গণমাধ্যমকেও এখন ভূমিকা রাখতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কারের কারণেই নীতিমালার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর প্রভাব নারীদের ওপরই পড়ছে। পুরুষ এ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তবে এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি রাষ্ট্র এবং রাজনীতির বড় একটি ভূমিকা আছে। নারী ভোটে জিতলেও ক্ষমতায় গিয়ে নারীর অধিকারের কথা ভুলে যায়। ক্ষমতায় যাওয়ার পর পুরুষ আরও শক্তিশালী হয়। এখানেই আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। নারীকেও নারীর জন্য জায়গা তৈরি করে দিতে হবে বলে বিশ্বাস করি।

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রসঙ্গে কী বলবেন?

পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকারে এখনও পূর্ণতা আসেনি। উত্তারাধিকার সম্পত্তিতে নারীর জন্য সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি পারিবারিক বিষয়। তবে আমি মনে করি রাষ্ট্র এবং সমাজকেই সাহসী হতে হবে এক্ষেত্রে। একটি পরিবারে একজন ছেলে যে সুযোগ পায় একজন মেয়েকেও সে সুযোগ দিতে হবে। একজন নারীকেও পরিবর্তন আনার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সর্বপ্রথম নারীকে নিজেদের মানুষ মনে করতে হবে। হাজারো বাধা আসতে পারে। কিন্তু এ বাধা কাটিয়ে উঠতে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে।

এ নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?

নারীকে নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। নারী বলে পুরুষের কাছে করুণা চাইতে পারি না। পরিবার থেকে নারীকে সুযোগ করে দিতে হবে। সবশেষে সমাজকে নারী সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। পুরুষ ঋণ পেলে নারী কেন পাবে না?

একজন পুরুষ যা করতে পারেন, আমিও তা করতে পারি। নারীর জ্ঞান পুরুষের সমান। তাহলে তারা কেন বৈষম্যের শিকার হবেন। এ ভাবনাগুলো আমলে নিলেই রাষ্ট্র সমান্তরালে এগিয়ে যাবে বলে মনে করি।

এএসএস/এনডিএস/পিআর