একসঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম। বৃহস্পতিবার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। নতুন দর অনুযায়ী, গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ছে। গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বেড়েছে।দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন যুক্তি দেখিয়েছে অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম অনেক কম। তাই ভর্তুকি কমাতে এই মূল্যবৃদ্ধি। গণহারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষজনের দুর্ভোগের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত ছিল। জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গণশুনানি করে থাকে। এবারও করেছে। তবে সেই শুনানিতে দাম না বাড়ানোর পক্ষে মত ছিল। ফলে এ ধরনের শুনানি কেবলই লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। গ্যাস-বিদ্যুত ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রার কথা চিন্তাও করা যায় না। বলা যায়, বেশিরভাব মানুষই এ দু`টি জ্বালানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একারণে মূল্যবৃদ্ধির আগে জনসাধারণের দুর্ভোগের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল।দুর্মূল্যের বাজারে এমননিতেই জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর ওপর বিদ্যুত ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি তাদের জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবেই বিবেচিত হবে। অধিকাংশ যানবাহন এবং ট্রাক, লরি এখন গ্যাসচালিত।গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যাত্রীভাড়া বাড়বে। বাড়বে পণ্য-দ্রব্য বহনের খরচও। এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজার আরও অস্থির হবে। শুধু তাই নয় বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বেড়েছে। দেখা যাচ্ছে, এই বৃদ্ধির কুফল মানুষজনকে নানা ভাবে ভোগাবে।এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ভর্তুকি কমানোর জন্য মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট রাস্তায় গিয়েছে। অথচ দুর্নীতি কমানো, সিস্টেমলস বন্ধ করাসহ নানাবিধ উপায়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি করা গেলে জনসাধারণকে আর বাড়তি পয়সা গুণতে হতো না। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। দেশের অনেক বিদ্যুতকেন্দ্র তেলচালিত। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের মূল্য সমন্বয় করলে আমাদের দেশেও তেলের মূল্য কমে যেত। এরফলে ইউনিটপ্রতি ৫/৭ টাকা বিদ্যুত উৎপাদন খরচ কম হতো বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। উৎপাদন খরচ কমলে বিদ্যুতের দাম আরও কমতো। উল্টো দাম আরও বাড়ানো হল। খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ালে শেষ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মূল্যবৃদ্ধির এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হতো না। এখনও সময় আছে। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার। আমরা আশা করবো জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জনহিতকর সরকারের এটিই দায়িত্ব। এইচআর/এমএস
Advertisement