দেশজুড়ে

ফুটপাতেই বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার!

নাগরিক জীবনে ক্রমাগত বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এসব চাহিদা মেঠাতে সিলেট নগরজুড়ে সরকারি নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ঝুঁকিপূর্ণ এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবসা করে গেলেও নীরব রয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

অদৃশ্য এ নীরবতাকে পুঁজি করে ফুটপাতে এমনকি আবাসিক এলাকাতেও বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। যেসব স্থানে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করছেন সেসব স্থানে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। প্রশাসন বলছে জনবল সঙ্কটের কারণে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিলেট নগরীর বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্র এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। এসব দোকান মালিকেরা কোনো বিধি-নিষেধ মানছে না। বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় নগরীর বাণিজ্যিক এলাকার মতোই আবাসিক এলাকায় অবাধে চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা। আবার এসব ব্যবসায়ীদের কাছে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রপাতি। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়ে যায়।

সিলেট নগরের বন্দরবাজার, মহাজনপট্টি, দক্ষিণ সুরমা ও সুবহানিঘাট এলাকায় প্রখর রোদে ফুটপাতে মজুদ করে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব এলাকার সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশিরভাগের নেই বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র। যাদের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স আছে তারাও নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন না। চায়ের দোকানেও এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মিলছে। মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেও বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস।

Advertisement

শুধু তাই নয় পান, ওষুধ, লন্ড্রি, সিমেন্ট, কসমেটিক এমনকি লাইব্রেরিসহ ফুটপাতের ছোটখাটো দোকানেও অবাধে মিলছে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার।

যেকোনো দোকানে ১০টির উর্ধ্বে গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ১০টির উর্ধ্বে গ্যাস সিলিন্ডার থাকলেও কোনো অনুমোদন নেননি বেশিরভাগ সিলিন্ডার ‘ব্যবসায়ী’।

সরকারি নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, জ্বালানি কাজে ব্যবহার্য সিলিন্ডার গ্যাস কোনো আবাসিক এলাকা বা মার্কেটে বিক্রি করা নিষিদ্ধ। গ্যাস সিলিন্ডার রোদে না রাখা, নিরাপদ দূরত্বে সিলিন্ডার মজুদ করা, উপর থেকে সিলিন্ডার নিচে না ফেলার নির্দেশনাও রয়েছে। এছাড়াও এই সিলিন্ডার বিক্রি করতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াও বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিতে হয়।

এছাড়া এলপিজি সিলিন্ডারগুলো সংরক্ষণের জায়গায় পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। বৈদ্যুতিক সুইচ ও অন্যান্য উপকরণও থাকবে গোডাউনের বাইরের অংশে। স্থানটিও হতে হবে আগুনের ব্যবহার আছে এমন জায়গা থেকে দূরে। এমন শর্তে অনুমোদনের ছড়াছড়ি থাকলেও তদারকি না থাকায় এসব নিদের্শনা আর নিষেধাজ্ঞা মানছেন না সিলেটের ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

বিস্ফোরক পরিদফতর সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় ৪৮৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে বিস্ফোরক লাইসেন্স নেয়া আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে অ্যামোনিয়া গ্যাসের এবং ৪০টির অধিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। পুরো জেলায় যে পরিমাণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বেশি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিলেট নগরেই রয়েছে। অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশনা থাকলেও জনবল সঙ্কটের কারণে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের সহকারী পরিচালক তন্ময় বিশ্বাস বলেন, স্টক বেশি রাখলে অগ্নিকাণ্ডের শঙ্কা থাকে। আর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা করা অনেক বিপদজনক। তাই এদিকে আমাদের সকলের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সিলেট বিস্ফোরক পরিদফতরের পরিচালক আবদুর রব বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানির কাছে চিঠি দিয়েছি। তাদের বলা হয়েছে অনুমোদনকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো বিক্রেতাদের গ্যাস সিলিন্ডার না দিতে। যদি কোনো কোম্পানি এসব নিয়ম না মেনে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা বলেন, গ্যাস সিলিন্ডারের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। শিগগিরই আমরা দায়িত্বশীলদের নিয়ে অভিযানে নামব এবং অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

ছামির মাহমুদ/এফএ/জেআইএম