ফিচার

মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল কেন সেরা?

পৃথিবীর উন্নত যেসব হাসপাতালের নাম সুপরিচিত, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ তারমধ্যে অন্যতম। বেশিরভাগ সময় বিশ্বের বিশিষ্ট কোন ব্যক্তির চিকিৎসার সাথে সাথে উঠে আসে এ হাসপাতালের নাম। তাই বিদেশি রোগীর চাপ মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালেই বেশি। এর কারণ, এখানে শুধু ভালো চিকিৎসকই নয়, সেরা চিকিৎসা প্রযুক্তি এবং ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো প্রশিক্ষিত দলও রয়েছে।

Advertisement

পরিচিতি: মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল সংক্ষেপে ‘মাউন্ট ই’ নামে পরিচিত। এটি একটি বেসরকারি হাসপাতাল। সিঙ্গাপুরে অবস্থিত ৩৪৫ শয্যার এ হাসপাতাল একটি বেসরকারি কোম্পানি ‘পার্কওয়ে হেলথ কোম্পানি’র মালিকানাধীন এবং ওই কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত। তবে ১৯৯৫ সাল থেকে পার্কওয়ে হোল্ডিংস লিমিটেড হাসপাতালটির মালিকানা লাভ করে।

যাত্রা শুরু: ১৯৭৬ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া এ হাসপাতাল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে।

চিকিৎসা: এ হাসপাতাল একই সঙ্গে হৃদরোগ, ক্যান্সার, কিডনি ও স্নায়ুজনিত রোগসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়াও এ হাসপাতাল একাধিক অঙ্গ প্রতিস্থাপন করার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করার জন্য প্রসিদ্ধ।

Advertisement

> আরও পড়ুন- জেনে নিন স্পিরুলিনার ওষুধি গুণাগুণ

বৈশিষ্ট্য: সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথের অর্কার্ড সড়কে অবস্থিত এ হাসপাতাল জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জয়েন্ট কমিশন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক স্বাস্থ্য সংস্থা) দ্বারা স্বীকৃত। সিঙ্গাপুরের প্রথম কোন বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে এখানেই সর্বপ্রথম ওপেন-হার্ট সার্জারি অস্ত্রোপচার করা হয়। এছাড়া আণবিক ওষুধ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি এবং তা ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ওষুধের দোকান রয়েছে।

রাজকীয় কক্ষ: ব্রুনাইয়ের রাজপরিবার হাসপাতালটিতে একটি রাজকীয় সুইট প্রতিষ্ঠা করেছিল। পরে অবশ্য এ রাজকীয় কক্ষটি অন্য রোগীদের ব্যবহারের জন্যও খুলে দেওয়া হয়।

শয্যা ভাড়া: ২০১৬ সালের হিসাব মতে, হাসপাতালটিতে চার শয্যার ওয়ার্ডে একটি শয্যার জন্য প্রতিরাতে ২৭৬ মার্কিন ডলার গুনতে হয়। সম্পূর্ণ নিজস্ব রুমের জন্য প্রতিরাতে খরচ হয় ৬৪০ মার্কিন ডলার।

Advertisement

মেডিকেল সেন্টার: হাসপাতাল সংলগ্ন মাউন্ট এলিজাবেথ মেডিকেল সেন্টার (এমইএমসি) অবস্থিত। এ ক্লিনিকে শুধু ব্যক্তিগত চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়। সিঙ্গাপুর মেডিকেল কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চিকিৎসকরাই শুধু এ হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টারে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সব মিলিয়ে মোট ৩১টি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ এ হাসপাতালে কর্মরত। স্নায়ুরোগ থেকে শুরু করে হৃদরোগ, দন্তচিকিৎসা, পাকান্ত্রবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সেবা দিয়ে থাকেন। রোগীর অবস্থা, ক্লিনিক ও বিশেষজ্ঞভেদে চিকিৎসা খরচ ভিন্ন ভিন্ন হয়।

> আরও পড়ুন- আজব ‘অসুখ’ থেকে মুক্তি চাইছেন ক্যারেন

ভাষা দক্ষতা: সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রোগী ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে। হাসপাতালের কর্মীরা ইন্দোনেশীয়, রুশ এবং মাওয় ভাষায় পারদর্শী।

বাংলাদেশের যারা সেবা নেন: বাংলাদেশের একাধিক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন সময় এ হাসপাতালের সেবা নিয়েছেন। তবে সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ হাসপাতালে মারা যান। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এ হাসপাতালে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য শওকত হোসেন হিরণকে এ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। যদিও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তবে চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখনো সুস্থ আছেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।

এসইউ/পিআর