বিশেষ প্রতিবেদন

নতুন আইন বাস্তবায়নে ভ্যাটের পাশাপাশি বাড়বে আয়করও

>> বহুস্তর বিশিষ্ট নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর জুলাইয়ে>> প্রি-বাজেট আলোচনা শুরু ১০ মার্চ

Advertisement

দুই বছর আগেই বহুল আলোচিত নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে তা করেনি সরকার। ফলে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনই কার্যকর রয়েছে। তবে গত বাজেট পাসের দিন সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা।

আর সরকার সে পথেই হাঁটছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে ভ্যাটের পাশাপশি আয়কর খাত থেকে রাজস্বও বাড়বে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, আগামী ১ জুলাই থেকেই নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করবে সরকার। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যে ভ্যাট আইন বস্তবায়নের জন্য সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে সে আইন পণ্য ও সেবার সর্বক্ষেত্রে 'অভিন্ন' একটি হার (রেট) হবে এবং এটি ১৫ শতাংশ আরোপের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আগামী জুলাইয়ে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া ভ্যাট আইনে তিনটি হার হতে পারে। ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ ও ১৫ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে পুরো কর অব্যাহতিও রাখা হবে। অর্থৎ এসব পণ্যে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন : সালের জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে ২০১০ সালে প্রণীত নতুন ভ্যাট আইন জাতীয় সংসদে পাস হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। এ আইন বাস্তবায়নকে সামনে রেখে পুরো ভ্যাট বিভাগকে অটোমেশন করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প হাতে নেয় এনবিআর। প্রকল্পটি এখনও চলমান।

এ আইনের আওতায় ভ্যাট আদায়ে ফাঁকি রোধে ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস বা ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেতা পণ্য কিনলে মূল্য ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে পরিশোধ করবে। যা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভ্যাটের দৈনিক ও মাসিক হিসাব পাওয়া যায়। এমনকি এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীর সব বেচা-কেনার তথ্যও সংরক্ষিত থাকবে। তাই ভ্যাট ফাঁকির কোনো সুযোগ থাকবে না।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নে জড়িত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও হিসাব নির্ভর এ আইনে ভ্যাট আদায়ের প্রত্যেক স্তরে বাধ্যতামূলক রেয়াত সুবিধা বা ক্রেডিট নেয়ার সুযোগ থাকবে। এ ক্ষেত্রে এক রেট হলে ভালো হত। এজন্য বিশ্বে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাটকেই আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনীতির দেশে বহুস্তরের ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন সহজ।

Advertisement

আরও পড়ুন: তিন কারণে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা যায়নি : সিপিডি

ভ্যাট তো দেয় ক্রেতা তাহলে ব্যবসায়ীদের আপত্তি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ী জনগণের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও সেই অর্থ সরকারকে জমা দেয় না। এছাড়া ব্যবসায়ীদের লেনদেনের বিষয়টি অটোমেশনে চলে আসলে একজন ব্যবসায়ীর সব সম্পদের হিসাব পাওয়া যাবে। ফলে কোনো ব্যবসায়ী আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে কিনা তা সহজেই ধরা পড়বে। তাই ব্যবসায়ীরা নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’

তবে তিনি বলেন, সরকার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এটি বাস্তবায়ন হলে ব্যবসার স্বচ্ছতার পাশাপাশি সরকারের ভ্যাট ও আয়কর থেকে রাজস্ব আদায় বাড়বে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনটি বাস্তবায়ন করতে অটোমেশনসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে এনবিআরকে। এ ক্ষেত্রে সময় আছে মাত্র তিন মাস। এ সময়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা বেশ চ্যালেঞ্জ হবে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, ১০ এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাটের দুটি হার করলে ভালো হয়। এতে কর অব্যাহতির তালিকা বাদ দিয়ে বাকি সব পণ্যে ১৫ শতাংশ এবং সেবাখাতে ১০ শতাংশ- এ দুই রেটে ভ্যাট আরোপ করলে রেয়াত নিতে জটিলতা হবে না। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পণ্য তৈরিতে উপকরণ লাগলেও সেবায় এর ব্যবহার তেমন নেই। ফলে রেয়াত দেয়া সহজ হবে। ভ্যাট বিভাগ পুরো অটোমেশন সম্পন্ন করে নতুন আইন বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি। তা না হলে বাস্তবায়নে সরকার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়বে।

আরও পড়ুন : নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে ১ জুন। আর বাজেট নিয়ে আলোচনা শুরু হবে ১০ মার্চ। অর্থনীতিবিদ, এনজিও, মন্ত্রণালয়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে বাজেট নিয়ে আলোচনায় বসবেন অর্থমন্ত্রী।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বা সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে মূলভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবারের বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য। সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে। আগামী বাজেটে গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে থাকছে বিশেষ পদক্ষেপ।

এমইউএইচ/এএইচ/এমকেএইচ