বয়স ৪০ বছর। এর মধ্যে ঢাকায় ২২ বছর ফুটবল খেলেছেন আকবর হোসেন রিদন। চট্টগ্রাম আর নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় লিগ মিলিয়ে ক্যারিয়ারটা আরও লম্বা তার।
Advertisement
সেই দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন সোমবার নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে। নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সি গায়ে মোহামেডানের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ খেলে বুট-জার্সি খুলে রাখলেন এ স্ট্রাইকার।
বড় মাপের ফুটবলার ছিলেন না। তবে একজন মিডিওকার স্ট্রাইকার হিসেবে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মিলিয়ে খেলেছেন ১২টি ক্লাবে। এর বাইরে নিজ জেলার আরো ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তার।
নোয়াখালীর যে স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচ খেললেন সেই শহীদ ভুলুর ধুলাবালি মেখেই ফুটবলে আগমন রিদনের। তৃতীয় বিভাগের দল ১৯৯৭ সালে লালমাটিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঢাকার ফুটবলে অভিষেক।
Advertisement
তারপর মুক্তিযোদ্ধা, বিআরটিসি, আরামবাগ, চট্টগ্রাম মোহামেডান, মোহামেডান, ফরাশগঞ্জ, চট্টগ্রাম আবাহনী, ফেনী সকার ক্লাব এবং সর্বশেষ নোফেলে ২ বছর কাটিয়ে থামলেন রিদন। চট্টগ্রাম লিগে খেলেছেন কাস্টমস ও মুক্তিযোদ্ধার হয়ে।
ঘরোয়া ফুটবলে এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৫০টির বেশি গোল আছে রিদনের। আছে অনূর্ধ্ব-২০ দলের জার্সি গায়ে একটি গোলও। ২০০৩ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে রিদনের একমাত্র গোলে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
বিয়ে করেছেন সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট শাহজান আক্তার বিউটিকে। জাতীয় অ্যাথলেটিকসের হার্ডলসে রৌপ্য পেয়েছেন বিউটি, স্বর্ণ আছে জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে। রিদনের তিন ছেলে-মেয়ে। ১৩ বছরের ছেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। রিদনের বাবা আবদুল আখের মিয়াও ফুটবলার ছিলেন। খেলতেন স্ট্রাইকিং পজিশনে; কিন্তু রিদনের ছেলে গড়ে উঠছেন স্টপার হিসেবে।
খেলা ছাড়লেও ফুটবল নিয়ে থাকতে চান রিদন। এএফসি ‘বি’ লাইসেন্স কোচিং কোর্স করেছেন। এই মৌসুমে নোফেলের সহকারী কোচ-কাম খেলোয়াড় হিসেবে আছেন। জার্সি খুলে এখন কোচিং পেশায়ই থাকবেন রিদন। লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে বাড়ি হলেও রিদন থাকেন নোয়াখালীতে। সেখানে স্টার ফুটবল একাডেমি গড়ে তুলেছেন বছর পাঁচেক আগে। তার একাডেমির ৫ ফুটবলার আছেন নোফেলে। তার একাডেমির ফুটবলার আছেন বিকেএসপি ও সাইফের একাডেমিতেও।
Advertisement
ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি স্মরণীয় হয়েই থাকল রিদনের। সোমবার নিজের চেনাজানা মাঠে নোফেল হারিয়ে দিয়েছে রিদনের সাবেক ক্লাব মোহামেডানকে। বিদায়বেলায় সতীর্থদের কাছ থেকে এর চেয়ে বড় উপহার আর কী পেতে পারতেন রিদন! বিদায়ের সময় তার সাবেক ক্লাব মোহামেডানের ফুটবলাররা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ক্যারিয়ারের ইতি টেনে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুলেননি রিদন, ‘নোয়াখালীর এই মাঠে খেলেই বড় হয়েছি। সেই মাঠেই অবসর নিলাম। আমাকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে দর্শকেরা। দর্শকদের এই ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। ক্যারিয়ারে আমি দর্শকের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। খেলা ছেড়ে দিলেও বাকি জীবন ফুটবল নিয়েই থাকতে চাই।’
আরআই/আইএইচএস/বিএ