দেশজুড়ে

বোনের জন্য এক ভাইয়ের ছুটে চলা

পৃথিবীতে ভাই-বোনের সম্পর্কগুলো কতটা মজবুত ও আন্তরিক হয় সেটি লিখে বা বলে প্রকাশ করা খুবই কঠিন। সম্পর্কের গভীরতা আসলে মেপে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সেটি অনুভবের বিষয়। একে অপরকে বুঝে নেয়ার বিষয়। কিন্তু কিছু কিছু সম্পর্ক দেখলেই বোঝা যায় সেটা কত গভীর বা কাছের। এর মধ্যে অন্যতম হলো ভাই-বোনের সম্পর্ক।

Advertisement

এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একজন ভাই আরেক ভাইয়ের জন্য কোনো কিছু করার ক্ষেত্রে ভাবতে যতটুকু সময় নেয়, কিন্তু বোনের জন্য সেই ভাবনার প্রয়োজন হয় না। একই অবস্থা বোনের ক্ষেত্রেও। দুজন যেন দুজনকে একটু গভীরভাবেই বোঝে।

একজন বোনের জন্য তার যে কোনো বয়সী ভাইটি সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীর মতো। বোনের যে কোনো সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য যেন সব সময় প্রস্তুত ভাই।

তেমনি এ বোনের তিনজন ভাই হলেন মাঈনউদ্দিন সুমন, ইমরুল কায়েস ও মাসুম বিল্লাহ। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় বাড়ি হলেও থাকেন রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকায়।

Advertisement

সুমন মিরপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছোট ভাই ইমরুল কায়েস চাকরি করেন পোশাক কারখানায়। সবার ছোট মাসুম বিল্লাহ রাজধানীর শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ মাস্টার্স করছেন। ভাইদের একমাত্র বোন হলো জান্নাতুল নাঈম। তিনি ইডেন মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স করছেন।

দুই বছর আগে ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা হেদায়েত উল্লাহকে হারিয়ে অভিভাবকহীন পরিবারটি কোনোমতে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে বোন কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিন ভাই ও মা ফাতেমা বেগম।

আড়াই মাস আগে একমাত্র বোনের সামান্য অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়েছে তার দুটি কিডনিই বিকল। এ খবরে ভাইদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সোচ্চার হয়ে ওঠেন বোনের চিকিৎসার বিষয়ে। বোনকে প্রথমে ভর্তি করা হয় আজগর আলী হাসপাতালে। সেখান থেকে কিডনি ইনস্টিটিউটে। এরপর নেয়া হয় কিডনি ফাউন্ডেশনে। সেখান থেকে পপুলার হাসপাতালে।

বর্তমানে জান্নাতুলকে রায়েরবাগের বাড়ি রাখা হয়েছে। তবে সপ্তাহে তিনদিন শ্যামলীতে ডায়ালাইসিস করাতে হয়।

Advertisement

এ পর্যন্ত বোনের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন তারা। এতে তাদের জমানো সব টাকা শেষ হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ডাক্তার বলেছেন, তার দুটি কিডনিই প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য প্রায় ৪৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। বোনের এমন খবর শোনার পর শোকাহত হয়ে পড়েছেন তিন ভাই।

চার ভাই-বোনের মধ্যে মাঈনউদ্দিন সুমন বড়। তিনি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস করে সন্ধ্যায় বোনের চিকিৎসার সব কাগজপত্র নিয়ে একেক দিন ছুটছেন একেকটি গণমাধ্যম অফিসে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পর বেশ সাড়াও পেয়েছেন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার জাগো নিউজ কার্যালয়ে আসেন মাঈনউদ্দিন সুমন। কথা হয় বোনের চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে।

সুমন বলেন, আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টাকা সহযোগিতা পেয়েছি। আরও ৩০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই টাকা জোগাড় করতে পারলেই তাকে নিয়ে যাব ভারতে। আমরা তাকে কিডনি দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু ম্যাচিং না করায় ডোনার বাইরে থেকে নিতে হচ্ছে। এ কারণে খরচও বেশি হচ্ছে। কিন্তু এত টাকা পাব কোথায়?

একমাত্র বোনকে বাঁচাতে সুমন বলেন, বোনকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। প্রতিটা মুহূর্ত দেখেছি তার। অনেক আদর যত্নে বড় করেছি। বিনা চিকিৎসায় তাকে হারাব এটা ভাবনায় এলেই শিউরে উঠছে শরীরের লোম। হৃদয়বান মানুষগুলো যদি আমার বোনটাকে নিজের বোনের জায়গায় রেখে একটু ভাবে তাহলেই হয়তো কিছু হবে, কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে। সবার বোনগুলোই হয়তো আমাদের এই আদরের বোনের মতোই।

জান্নাতুল নাঈমের পাশে কেউ দাঁড়াতে চাইলে যোগাযোগ করা যাবে বড় ভাই সুমনের সঙ্গে। তার মোবাইল নম্বর ০১৭৪৮০৮১৫৩১। কেউ সহযোগিতা পাঠাতে চাইলে পাঠাতে পারবেন এই ঠিকানায়।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: মাঈনউদ্দিন-২১০১৫১২৮১৭০০১, সিটি ব্যাংক,পল্লবী ব্রাঞ্চ।

এমএএস/জেআইএম