সাম্প্রতিক বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট এবং সদ্য রোপিত আমন আবাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নামলেও ঢলে ডুবে যাওয়া আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। অনেকস্থানে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে বালি আসায় আবাদি জমিতে বালির আস্তরণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ভেঙ্গে যাওয়ায় গ্রামীণ যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওইসব রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষদের। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ব্রীজ-কালভার্ট মেরামতসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুই এখন তাদের প্রধান দাবি।বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলে তাদের আমন ফসল ডুবে যাওয়ায় তারা বেশ ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। ধানগাছ ডুবে যাওয়ায় তা পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া এখন নতুন করে বীজতলা সংগ্রহ করাও তাদের জন্য কষ্টসাধ্য।ঝিনাইগাতী ধানশাইল এলাকার কৃষক জাকিউল হক (৪৮) বলেন, আমি আড়াই একর জমিতে আমন লাগিয়েছিলাম। কিন্তু পর পর তিন দফায় পাহাড়ি ঢলে আবাদ একেবারে শেষ হয়ে গেছে। আবাদি জমিতে ঢলের সঙ্গে আসা বালির স্তর পড়েছে। এখন কিভাবে কি করবো, কিছুই বুঝে ওঠতে পারছি না।একই এলাকার মো. চাঁন মিয়া (৩৫) নামে আরেক কৃষক জানান, আড়াই একর জমির আমন ফসল পাহাইড়া ঢলে খাইয়ি গেলোগা। এহন নতুন করে আমন যে লাগাবো জালা (বীজতলা) কোথায় পাবো। সরকার থেকে যদি জালার ব্যবস্থা হতো তাহলে খুব ভালো হতো। ফসলটা আবার করতে পারতাম।রানীশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু শামা কবীর বলেন, এবার টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এর আগে কখনো তা হয়নি। পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন আবাদ। এখন পানি নেমে গেছে। দ্রুত পুনর্বাসন কাজ শুরু করার জন্য আমি সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি।শেরপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৮ হাজার ৫৮৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ এবং এক হাজার ৪৫ হেক্টর জমির ফসল আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৩৪৩টি মাটির ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৬টি কাঠের কালভার্ট ধ্বংস হয়েছে এবং ১৯টি ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট। পাহাড়ি ঢলে এক হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং বন্যার সময় বজ্রপাতে একজন নিহত ও ঘরচাপা পড়ে ৫ জন আহত হয়েছে।ভারপ্রাপ্ত জেলা ত্রাণ ও পুনর্বসান কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন জানান, সম্প্রতি পাহাড়ি ঢল, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি পরিবারের মাঝে খয়রাতি সাহায্য হিসেবে ৬০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে জরুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট পঠানো হয়েছে।শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুস সালাম বলেন, বর্ষণ ও ঢলে আমন আবাদ ডুবে গেলেও পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় আমন আবাদের খুব বেশি একটা ক্ষতি হবে না। যেসব জমিতে আমন ধানগাছ ডুবে নষ্ট হয়েছে, সেখানে আমন রোপনের এখনো সময় আছে।বীজতলার কোন সমস্যা নেই দাবি করে তিনি বলেন, পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদেরকে ওই সব জমিতে আবারো আমন রোপনের জন্য তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।হাকিম বাবুল/আরএস
Advertisement