সাহিত্য

প্রদীপ মাহবুবের গুচ্ছ কবিতা

অন্য এক তোমায়

Advertisement

সেদিন জোনাকজ্বলা সন্ধ্যায় ‘অন্য এক তোমায়’ দেখেছিলাম। মুক্তাঝরা হাসিতে বিলীন হয়েছিলআঁধারের নীলিমা,চোখের ফোয়ারায় বিধ্বস্ত হয়েছিল ঝিলের কৃত্রিম ঝর্ণাধারা, আর আলোকরশ্মির বর্ণিল বিচ্ছুরণ। কামনার দৃষ্টিতে ভস্মীভূত হয়েছিলহাজার বছরের অপেক্ষারত প্রকৃতির প্রমত্ত যৌবন।দগ্ধ হৃদয়ে সুনামির উত্তাপ ছড়িয়েছিলআমার প্রেমহীন লাল গোলাপ। সেই গোলাপেআনমনে খুঁজেছিলে নখদন্তহীন কাঁটার উন্মত্ত পরশ! ব্যাকুল ঠোঁটের অব্যক্ত ভাষায় ফুটেছিলঅসম প্রেমের নির্মল হাতছানি। আর ইতিহাস রচনার মোহেবাহু যুগলে লেগেছিল বিদ্যুতের ঝলকানি।তোমার শিকারি দুই চোখপ্রেমে খুঁজেছিল যৌনতা, কিন্তু আমার পোড়া হৃদয়যৌনতায় খুঁজেছিল প্রেমের অমরত্ব।

নিষিদ্ধ ভালোবাসার নিষ্পাপ স্পন্দন

অজানা শুক্রের নিষিদ্ধ ভালোবাসায়যে নবজাতক ভূমিষ্ঠ হলোসে বোঝে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা।নিষিদ্ধ পল্লি, রেলের ধার, ফুটপাত আর পার্কেবেড়ে ওঠে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অথবাঅংকুরেই বিনষ্ট হয় নিষিদ্ধ ভালোবাসার নিষ্পাপ স্পন্দন ডাস্টবিন কিংবা নদীর খরস্রোতে।যদি বেঁচে যায়- হাতের থালায় ঘোরপাক খায় বেঁচে থাকা না থাকার প্রতিশ্রুতি। কাদা নর্দমার ভিড়ে জমে থাকা মাংসের উচ্ছিষ্ট হাড়েরচিত হয় পরাজিত সংগ্রামের ইতিহাসবস্তাবন্দী ঘুমে পার হয় দীপ্তিময় যৌবন। নগরীর ভাগাড়ে, ইট পাথরের ঘুঙুর শব্দে কিংবাচার দেয়ালের মেঝেতে খোঁজে জীবনের মানে।পিতৃ পরিচয়হীন ভালোবাসার স্পন্দনেপৌঁছায় না সভ্যতার ছায়া!যানবাহনের চাকায় ঘুরতে ঘুরতে কোনও একসময়হাতে ওঠে ট্রিগার। কখনও জীবনের তাড়নায়হতে হয় আঁধারের অতিথি পাখি।নিষিদ্ধ ভালোবাসা মানে না সমাজ, সংসার, জাত-ধর্মঅথচসমাজ, সংসার, জাত-ধর্মেই নিষ্পেষিতনিষিদ্ধ ভালোবাসার নিষ্পাপ স্পন্দন। যুগে যুগে, অবিরাম!

Advertisement

আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো বলে

আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো বলে- নক্ষত্রের রাতে দূর আকাশের তারা গুনবো না,চাইবো না চোখের জলে সমুদ্রের নোনা জলের অমরত্ব।আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো বলে-পথ চেয়ে পার করবো না একটি বসন্তও,উন্মত্ত যৌবন চৈত্রের খরতাপে নিঃশেষ করার ইচ্ছাও নেই একবিন্দু।আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো বলে-স্পর্শ করবো না মাতাল হওয়ার লাল জল,অন্য আঁচলে খুঁজবো না স্বর্গের সুখ।আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো বলে-গ্লানিবোধে হাতে নেবো না বিষের পাত্র খুঁজবো না জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানোরঅর্থহীন অযাচিত পথ।আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো বলেইপৃথিবীকে হাতের মুঠোয় পুরেহবো অবিনশ্বর।

তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে

আমাদের সমান্তরাল ভালোবাসার অসমান্তরাল সমাপ্তিঅতঃপর- ছুটে বেড়িয়েছি উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরুকুড়িয়ে এনেছি সমুদ্রতলের নিষ্প্রাণ শৈবালঅবলোকন করেছি ভিসুভিয়াসের অব্যক্ত দীর্ঘশ্বাস।নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ঝর্ণাধারায় শুনেছি মেঘের কান্না সাইবেরিয়ার বরফপথে দেখেছি পরাজিতদের পদচিহ্ন সাহারা মরুভূমির উষ্ণ বালিতে খুঁজেছি হৃদয়ের উত্তপ্ততা আমাজনের নির্জনতায় আবিষ্কার করেছি নিঃসঙ্গতার স্বরূপ।তোমাকে হারিয়ে তোমাতে খুঁজিনি জীবনের মানেতাঁদের কাছে বুঝেছি- জীবন থমকে যাবার জন্য নয়জীবন সংগ্রামের, জীবন ভালোবাসারতোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে।

Advertisement

ফাগুনের প্রেম

ফাগুনের শাড়ির আগুনেম্লান শিমুলের ফুল, ভোরের সূর্যের দীপ্তি বাড়ায়কানের সোনালি দুল।কালো ভ্রুতে ভ্রমর হারায় চোখের পাতায় নদী,গালের তিলে নেশা ধরায়প্রেম ঝরে নিরবধি।রাত যতো গভীর হয়মাতাল হয় মন,কাছে পাওয়ার বাসনায়কাটে না ক্ষণ।

কবি: সহকারী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/এমএস