দেশজুড়ে

সিলেট নগরে টাউন বাস সার্ভিস বন্ধ হওয়ার উপক্রম

যাত্রা শুরু হয়েছিলো ৩৫টি বাস নিয়ে। এখন চলাচল করছে মাত্র ১৯টি।তাও সবগুলোই ভাঙাচোরা।যাত্রার শুরুতে চলাচল করতো নগরের ১০টি রুটে। এখন সঙ্কুচিত হতে হতে মাত্র দুটি রুটে চলাচল করছে। এই হচ্ছে সিলেটের টাউন বাস সার্ভিসের অবস্থা। এই টাউন বাসগুলোই ছিলো নগরবাসীর একমাত্র গণপরিবহন। অথচ ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও যাত্রা শুরুর মাত্র ৬ বছরের মাথায় টাউন বাস সার্ভিস বন্ধের উপক্রম হয়েছে। আর গণপরিবহণের সঙ্কটে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। জানা যায়, সিলেট নগরীতে গণপরিবহন না থাকায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমালে ২০০৮ সালের ২৬ মার্চ চালু হয় ‘টাউন বাস সার্ভিস’। ছোট আকারের ৩৫টি বাস নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে এই সেবা চালু হয়। যানবাহন সঙ্কট ও ভাড়া অপেক্ষাকৃত কম থাকায় যাত্রা শুরুর পরপরই নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে টাউন বাস সার্ভিস। বিশেষত নিন্মবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগরিকদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হয়ে উঠে এ বাসগুলো। তবে ছয় বছর যেতে না যেতেই দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।লোকসানের কারণে ধুকতে শুরু করেছে টাউন বাস সার্ভিস। সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে এই সেবা। যাত্রীদের অভিযোগ, শুরুতেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ায় টাউন বাসের সেবার মান দিন দিন নিন্মগামী হতে থাকে। এছাড়া ভাঙাচুরা বাস, ধারাবাহিকভাবে ভাড়া বাড়িয়ে চলা ও গন্তব্যে পোঁছাতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগার কারণে যাত্রীরা টাউন বাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।তবে নগরে ভালো মানের গণপরিবহনের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সকল যাত্রীই। আর টাউন বাস মালিক সমিতির অভিযোগ, নগরে বাসের জন্য পার্কিং প্লেস ও যাত্রী উঠা নামার জন্য যাত্রী ছাউনি না থাকা, যাত্রজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌছতে না পারাসহ নানা কারণে দিন দিন যাত্রী কমতে থাকে। ফলে লোকসানে পড়তে হয় টাউন বাসের ব্যবসায়ীদের। তাই ব্যবসা অনেকটাই গুটিয়ে নিতে হচ্ছে তাদের। ফলে ৩৫টি বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ছয় বছর পর বাস বাড়ানোর বদলে বরং ১৬টি বাস উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই বাসগুলো এখন আন্তঃজেলা সড়কে চলাচল করছে। আর যাত্রার শুরুতে নগরীর বন্দরবাজার থেকে জালালপুর, হেতিমগঞ্জ, হাজীগঞ্জ, বটেশ্বর, টুকেরবাজার, এয়ারপোর্ট, লালাবাজার, কামালবাজার, বোরহান উদ্দিন সড়ক, মেডিকেল সড়ক- এই দশটি সড়কে চলাচল করলেও এখন সঙ্কুচিত হতে হতে বন্দরবাজার থেকে মোগলাবাজার ও হেতিমগঞ্জ এই দুটি সড়কে চলাচল করছে টাউন বাস। এ সড়ক দুটিতে চলাচলকারী বাসের অবস্থাও খুবই নাজুক।লোকসান কাটিয়ে উঠতে না পারলে আগামী টাউন বাস সার্ভিস পুরোপরি বন্ধ করে দেওয়ারও চিন্তা করছেন সংশ্লিস্টরা। আর গণপরিবহন সেবা দিনদিন সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় যাত্রীদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশা অটোরিকশা ও ঝুঁকিপূর্ণ টমটমে চলাচল করতে হচ্ছে। সিলেট নগরের গোটাটিকরের বাসিন্দা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলী হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বাসা থেকে আমাকে ভার্সিটি যেতে অন্তত তিনবার পরিবহণ পরিবর্তন করতে হয়। প্রথমে রিকশায় করে কদমতলী ওভারব্রিজ, সেখান থেকে অটোরিকশা অথবা টমটমে করে বন্দরবাজার এরপর আবার আরেকটি অটোরিকশায় করে ভার্সিটি গেইট যেতে হয়। এ কারণে একে তো অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয় তার উপর সময়মতো গাড়ি না পেলে পড়তে হয় বিপাকে। অথচ আগে টাউন বাস সার্ভিস থাকাকালে বাসার সামনে থেকে সরাসরিই ভার্সিটি গেইট যেতে পারতাম। এখন এই সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিলেট টাউন বাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহ জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, আমাদের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে আমরা লোকসানের কবলে পড়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হচ্ছে। নগরের বিভিন্ন রুট থেকে বাস উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিলেট নগরীতে গণপরিবহণ সার্ভিস চালু প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নাগরিকদের সেবার কথা বিবেচনা করে সিটি করপোরেশন ও নিটোল টাটার উদ্যোগে নগরীতে একশটি বাস চালুর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে আশা করছি আমরা সফল হবো।ছামির মাহমুদ/ এমএএস

Advertisement