দেশজুড়ে

মরে যাচ্ছে নদীর মাছ

নওগাঁ শহর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পানি গত কয়েকদিন থেকে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। পানি দূষণের ফলে জলজপ্রাণী ও মাছ মারা যাচ্ছে। এতে করে মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

Advertisement

পাশাপাশি পানি দূষণের ফলে পরিবেশ পড়েছে হুমকির মুখে। জয়পুরহাট চিনিকলের বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট যমুনা নদী নওগাঁর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে মিলিত হয়েছে। জয়পুরহাট চিনিকল স্থাপনের পর থেকে প্রতি বছর চিনিকলের বর্জ্য ছোট যমুনা নদীতে ফেলা হয়। জয়পুরহাট অংশে ছোট যমুনা নদীতে বিষাক্ত বর্জ্য ফেলায় উজান থেকে বেয়ে ভাটার দিকে নওগাঁ ছোট যমুনা নদীর পানির সঙ্গে মিশে। বিষাক্ত বর্জ্য পানির সঙ্গে মিশে পানির রং বিবর্ণ হয়ে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে ছোট যমুনা নদীর পানি দূষণে পানিতে বাস করা জলজপ্রাণী ও মাছ মারা যায়। সেই সঙ্গে নদীর দুই পাড়ে বসবাস করা হাজার হাজার মানুষ নদীতে গোসলসহ কৃষিকাজে ব্যবহার করা পানি অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

এর প্রতিবাদে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ নদী বাঁচানোর দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভাসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। ফলে বাধ্য হয়ে জয়পুরহাট চিনিকলের বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করে দেয়।

Advertisement

কিন্তু আবারও চিনিকলের বিষাক্ত বর্জ্য ছোট যমুনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে উজান থেকে চিনিকলের বর্জ্য ভাটার দিকে নেমে আসায় নদীর পানিতে মিশে গত দুইদিনে পানি দূষিত হওয়ায় মাছের মড়ক দেখা দেয়। দূষণের ফলে প্রথমে মাছ অসুস্থ হয়ে ভেসে উঠছে এবং পরবর্তীতে মারা যাচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নদীর দুই পাশে মরা মাছ ধরতে দেখা যায় স্থানীয়দের।

নদীর পাড়ে বসবাসকারী একাধিক বাসিন্দা জানান, গত কয়েকদিন থেকে নদীর পানির রং বিবর্ণ হতে থাকে। এরপর থেকে পানিতে থাকা জলজপ্রাণী কীটপতঙ্গ ও মাছ মারা যায়। বিভিন্নভাবে সেসব মরা মাছ ধরছেন তারা। কয়েক বছর আগেও এমন ঘটনা ঘটে। জয়পুরহাট চিনিকলের বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলায় এমন ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসিন রেজা বলেন, ছোট যমুনা নদী একসময় খরস্রোতা ছিল। নদী থেকে মাছ আহরণ করে হাজারো পরিবার জীবিকা নির্বাহ করত। ধানক্ষেতে ব্যবহার করা হয় নদীর পানি। কিন্তু জয়পুরহাটের চিনিকলে ব্যবহৃত বর্জ্য ছোট যমুনা নদীতে ফেলার ফলে মারা যাচ্ছে মাছ ও জলজপ্রাণী। কিছুদিন পর নদীর ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে পারবে না। ফলে জীবিকা নিয়ে বিপাকে পড়বে তারা। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা নদীতে চিনিকলের বর্জ্য ফেলার কথা অস্বীকার করেছে। তবে জেলা মৎস্য বিভাগকে নদীর পানি দূষণের মূল কারণ উদঘাটন পূর্বক রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারপর বিষয়টি জানা যাবে কি কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।

Advertisement

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম জিয়াউল ফারুক বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে মিল বন্ধ রয়েছে। মিলে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে বিষাক্ত বর্জ্য ছোট যমুনা নদীতে যাওয়ার সুযোগ নাই।

আব্বাস আলী/এএম/পিআর