দেশজুড়ে

ইয়াবায় সয়লাব সিলেট, এসআইসহ গ্রেফতার ১৪৫

প্রশাসনের কঠোর নজরদারী থাকা সত্ত্বেও সিলেটে হাত বাড়ালেই যেন মিলছে ইয়াবাসহ মরণব্যাধি বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। পুরুষের পাশাপাশি মহিলা, পুলিশের সোর্স এমনকি পুলিশ প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্য গোপনে জড়িত থাকায় মূলত সহজলভ্য হয়ে উঠছে এসব মাদকদ্রব্য। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সিলেটে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তৎপর। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাবে দেশজুড়ে ইয়াবার প্রকোপ কিছুটা কমলেও বর্তমানে সিলেটে ইয়াবায় সয়লাব।

Advertisement

গত ২৭ জানুয়ারি রাতে সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায় জোরপূর্বক ইয়াবা সেবনের মাধ্যমে শিশুদের দিয়ে পতিতাবৃত্তি করানো ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৭ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া (৪০) ও রিমা বেগম (৩৫) নামের এক নারীকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৯।

এরা দুজন ভুয়া স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দাড়িয়াপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে মাদক ব্যবসা করে আসছিলেন। র্যাবের ওই অভিযানে তাদের বাসা থেকে ৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও তাদের কাছে বন্দি থাকা দুই শিশুকে উদ্ধার করে র্যাব। পরে মানবপাচার ও মাদক আইনে র্যাব-৯ এর করা দুটি মামলায় পুলিশের এসআইসহ দুজনকে আটক দেখিয়ে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয় ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট ও আশেপাশের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ, ওসমানীনগর, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার হয়ে সিলেট শহরে কাষ্টগড় ও দক্ষিণ সুরমা এলাকাকে কেন্দ্র করে চলছে ইয়াবার মূল ব্যবসা। সিলেট শহরের উঠতি বয়সী, প্রবাসীদের ছেলেমেয়ে ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা কিশোররা, বড়লোক বাবা-মায়ের বখে যাওয়া সন্তানই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মূল টার্গেট।

Advertisement

ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বাসায় হোম ডেলিভারির পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে কর্তৃপক্ষের কিংবা হোটেল বয়ের মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে ডেলিভারি করছে তারা। পুরুষ-মহিলার পাশাপাশি পুলিশের সোর্স জড়িত থাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা থাকছে ধরাছোয়ার বাইরে। পুলিশের এসব সোর্স কতিপয় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের যোগসাজশে এমন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

তবে, এ বছরের শুরু থেকেই সিলেটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে হার্ডলাইনে প্রশাসন। গত দুই মাসে সিলেট মহানগর পুলিশের অভিযানের পরিসংখ্যান থেকে অন্তত তা স্পষ্ট বুঝা যায়।

এসএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে শুধু মহানগর পুলিশ কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে ১৪৬ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে এসএমপির ছয়টি থানায় ৯৯টি মামলার এসব আসামির বেশিরভাগই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পুরুষ ব্যবসায়ীর সঙ্গে বেশ কয়েকজন মহিলাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এ বছরে এ পর্যন্ত সিলেট মহানগর পুলিশের অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৪২ পিস ইয়াবা, ৫ গ্রাম হেরোইন, ৭ কেজি গাজা, ৭৩ বোতল ফেন্সিডিল, ৬৫১ লিটার চোলাই মদ, ৮০০ লিটার চোলাই মদ তৈরির উপকরণ এবং ২৫ বোতল বিয়ার।

Advertisement

সিলেটের মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মূসা জানান, সিলেটে মাদকের প্রকোপ কমাতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। সিলেটে গত দুই মাসে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেছি প্রায় দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে। ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কোনো অবস্থাতেই মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের গডফাদাররাও ছাড় পাবে না।

তিনি আরও জানান, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করে যাচ্ছে। গত দুই মাসে তাদের অভিযানেও গ্রেফতার হয়েছে অনেক মাদক ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযান চলছে। এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক মাদক জব্দ করা হয়েছে। এটি ভালো অবস্থায় না আসা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সিলেটে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত পুলিশের সোর্স কিংবা সিলেটে বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে দায়িত্বরত অনেক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি-না এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের এই মুখপাত্র বলেন, সিলেটে পুলিশের কোনো সদস্য ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি-না তা বলতে পারছি না। তবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন এ ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুশীলন করব। কোনো পুলিশ সদস্য যদি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছামির মাহমুদ/এমএএস/পিআর