সুস্থ্য ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে হলে দর্শক টানতে না পারায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমা হল। সেই সঙ্গে স্যাটেলাইটে ভারতীয় চ্যানেলের প্রভাব ও ভিডিও পাইরিসির কারণেও বড় পর্দার সিনেমা হলগুলো দর্শক খড়ায় ভুগছে।
Advertisement
হল বন্ধ হবার এই মিছিলে রয়েছে রাজবাড়ী জেলার হল ব্যবসা। ঘরে ঘরে রঙ্গিন টেলিভিশন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির রঙ্গিন আলোর ঝলকানিতে সাধারন দর্শক এখন আর পয়সা ও সময় ব্যয় করে হলের বড় পর্দায় ছবি দেখার আগ্রহ পায় না। তাছারা সিনেমা মুক্তির আগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সিনোমাগুলো। যার কারণে দর্শক সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখতে চায় না।
তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হল ব্যবসায়ে। রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায় এক সময় ২০টি সিনোম হল ছিল। এখন ওই হলগুলোর বেশিরভাগই অস্তিত্বহীন। বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র ৩টি সিনেমা হল। এগুলোও মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকে দর্শকের অভাবে।
দিনে কয়েকটি শো চলার থাকলেও কোন শো-তেই দর্শক পরিপূর্ণ হয় না। লোকসান গুনে গুনেই চলছে হলগুলো। যে কোনো সময় চালু সিনেমা হলগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা দেখা দিয়েছে।
Advertisement
রাজবাড়ী জেলা সদরে হোসনে বাগ, টাউন হল, সাধনা, চিত্রা, বসুন্ধরা ৫টি সিনেমা হল ছিল । বর্তমানে চালু রয়েছে একমাত্র সাধনা সিনেমা হল। বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৮ টি সিনেমা হলের ৮ টিই বন্ধ রয়েছে।
পাংশা উপজেলার ৩টির মধ্যে ৩টিই বন্ধ, কালুখালী উপজেলার একমাত্র হল বৈশাখী কোনো রকমে চালু রয়েছে। গোয়ালন্দ উপজেলার ৩টির মধ্যে ২টি বন্ধ ও ১টি তাজ ডিজিটাল সিনেমা চালু রয়েছে।
দর্শকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, আগে তারা সিনেমা হলে এসে ঘরোয়া পরিবেশে অনেক ছবি দেখতেন এবং ভাল ভাল ছবি। বর্তমানে যে ছবি নির্মাণ করা হচ্ছে সে ছবিগুলো দেখে মজা পান না। ছবির গল্প কাহিনী কিছুই ভাল না। শুধু রং, ঢং।
জীবনের বাস্তবতা নেই, পরিবারের গল্প নেই, মানুষের মনের ভাব এইসব ছবিতে ফুটে উঠে না। ভাল ছবি নির্মিত হলে হলগুলোতে দর্শক আসবে বলে মনে করেন তারা। কারণ ভাল গল্প কাহিনীর ছবির অভাবেই তারা হলে যান না।
Advertisement
আগের মত ভাল গল্পের ছবি নির্মিত হলে এবং সিনেমা হলের পরিবেশ ভাল করলে দর্শক আবারও হলে গিয়ে ছবি দেখবেন।
এদিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, দুই-একটি হল যাও চালু আছে, দর্শক না হওয়ায় সময় মত শো শুরু হচ্ছে না। যারা ছবি দেখতে যান তারা বিরক্ত হন হলে বসে থাকতে থাকতে। আবার হলের বদ্ধ-গুমোট পরিবেশের যন্ত্রণা তো আছেই।
রাজবাড়ী সাধনা হলের শ্রমিকরা জানান, জেলা শহরে মাত্র এই সাধনা হলটি চালু রয়েছে। দিনে তিন চারটি শো চলার কথা থাকলেও দর্শকের অভাবে মাত্র একটি বা দুটি শো চলে। তাও দর্শক হয় সর্বোচ্চ ২০-২৫ জন। এতে বিদ্যুৎ বিল, স্টাফ খরচই হয় না। মালিক লাভ করবে কোথা থেকে!
হল শ্রমিকরাও ভাল মানের ছবির অভাবকে দায়ী করলেন সিনেমার মন্দা ব্যবসার জন্য। তাদের মতে ভাল ছবি হলে সিনেমা হল ব্যবসায়ীরা বাঁচবেন, তাদের জীবিকারও উন্নতি হবে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া মধুমতি সিনেমা হলের মালিক মো. নায়েব আলী বলেন, ‘যখন থেকে অশ্লীল ছবি নির্মাণ শুরু হয়েছে তখন থেকেই হলের সঙ্গে দর্শকের দূরত্ব বেড়েছে। সুস্থ রুচির দর্শক সেই যে হল বিমুখ হলেন, তারা আর ফিরেননি।
দর্শক না আসলে কার জন্য হল চালাবো? হলে একটি শো চালাতে অনেক খরচ হয়। সেই খরচ না উঠলে লোকসান দিয়ে কতদিন হল চালানো যাবে। বাধ্য হয়ে হল বন্ধ করে দিয়েছি।’
প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর হল বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘অনেক সম্ভবানা দেখে বুক ভরা প্রত্যাশা নিয়ে হলের ব্যবসায়ে এসেছিলাম। কিন্তু সেই স্বাদের ব্যবসায় বন্ধ করে দিতে হলো। ভবিষ্যতে ভাল ছবি আসলে হয়তো আবার হল চালু করবো।’
রুবেলুরর রহমান/এলএ/জেআইএম