জাতীয়

হার্টে ব্লক নিয়েই জাতীয় নির্বাচনে ছুটে বেড়ান কাদের

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার হার্টে আগে থেকেই দুটি ব্লক ধরা পড়েছিল।

Advertisement

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ ভরসা। সামনে জাতীয় নির্বাচন। আগে নির্বাচন শেষ হোক তারপর না হয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োজনে স্ট্যান্টিং, বাইপাস কিংবা ওপেন হার্ট সার্জারি করব।’

তিনি যে মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন কিংবা ব্লক ধরা পড়েছে সে তথ্যও মিডিয়া কিংবা অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চিকিৎসকদের নিষেধ করেছিলেন কাদের। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে জোরে বক্তৃতা না করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রাত্যহিক জীবনযাপন এবং খাবার গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসএমএমইউর একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ অজানা তথ্য জানান।

Advertisement

এদিকে জাতীয় নির্বাচন শেষেও নতুন মন্ত্রিসভা গঠনসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় ওবায়দুল কাদের আর হাসপাতালমুখী হননি। তিনি নিয়মিত হাঁটলেও ডায়াবেটিস ছিল অনিয়ন্ত্রিত। এ কারণেই আজ রোববার সকালে হাসপাতালে ভর্তির পর তার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর এনজিওগ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। একটিতে শতভাগ, একটি ৯৯ ভাগ ও একটিতে ৯০ ভাগ। চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে একটিতে রিং (স্ট্যান্টিং) পরান। আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে এ অবস্থায় রোগীকে তিনটি রিং কিংবা ওপেন হার্ট সার্জারি করা যায় না। তাই অন্য দুটিতে পরানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি কার্ডিয়াক আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। তার রক্তচাপ ক্রমশ কমে যাচ্ছে বলেও জানান চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা জানান, সিঙ্গাপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সন্ধ্যা ৭টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার কথা। অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান নামে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তার সঙ্গে যাবেন। ইতোমধ্যে তার পাসপোর্ট নেয়া হয়েছে।

সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম।’ তিনি যে সত্যি কথা বলেছিলেন তার অকাট্য প্রমাণ মেলে তারই অনুসারী আরেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কঠিন অসুখ গোপন রেখে জাতীয় নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করতে দিনরাত ক্লান্তিহীনভাবে নিজ নির্বাচনী এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছুটে চলার মাধ্যমে।

বিএসএমএমইউ’র ওই অধ্যাপক যিনি শুরু থেকেই মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় সম্পৃক্ত আছেন তিনি জাগো নিউজকে জানান, গত রাত ৩টা থেকেই তিনি অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। এ সময় তার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। সকালে ব্যথা বাড়লে তাকে বিএসএমএমইউর আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তার এনজিওগ্রাম করেন। ওবায়দুল কাদেরের হৃদপিণ্ডে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এ সময় রিং বসিয়ে তার একটি ব্লক অপসারণ করা হয়।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদেরের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ব্লাড প্রেসার কমে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ৭টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেয়ার কথা। তিনি দেশবাসীর কাছে ওবায়দুল কাদেরের জন্য দোয়া কামনা করেন।

তার সঙ্গে সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্য যে অধ্যাপকের নাম শোনা যাচ্ছে সেই অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামানের সঙ্গে দুপুরে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এখনও নিশ্চিতভাবে জানেন না। তবে তার কাছ থেকে পাসপোর্ট নেয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে ব্রিফ করছেন। এ কারণে তিনি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

এমইউ/এনডিএস/পিআর