কালো টাকা এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধ করতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে অটোমেশন (অনলাইন) পদ্ধতিতে শুরু করেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর। প্রাথমিকভাবে ফেব্রুয়ারি থেকে এ অটোমেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়, সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায়, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের ব্যুরো অফিস (গুলিস্তান) এবং বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের প্রধান কার্যালয়।
Advertisement
আগামী ১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী এটি শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারি ব্যয়-ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে একদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এ প্রশিক্ষণ আয়োজনের অনুমতি দিয়েছে অর্থ বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অর্থবিভাগে বাস্তবায়নাধীন ‘সরকারি ব্যয়-ববস্থাপনা শক্তিশালীকরণ : অগ্রাধিকার কার্যক্রমসমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক কর্মসূচি জাতীয় সঞ্চয়স্কিম ব্যবস্থাপনা অটোমেশনের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক সিস্টেম প্রণয়ন করেছে। উক্ত সিস্টেম যথাযথভাবে ব্যবহার নিশ্চিতকরণার্থে সঞ্চয়পত্র লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ৪২টি ব্যাচে ভাগ করে একদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্স এর কম্পিউটার ল্যাবে এ প্রশিক্ষাণ দেয়া হচ্ছে।
এ কর্মসূচীর আওতায় সোনলী ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র বিক্রির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ১৩টি ব্যাচে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ১১টি ব্যাচে আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু করে ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ১৮টি ব্যাচে আগামী ২১ মার্চ থেকে শুরু করে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
Advertisement
জানা গেছে, ‘ন্যাশনাল সেভিং সার্টিফিকেটস অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে সঞ্চয়পত্রের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। নতুন এ ডাটাবেজ চালু হলে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ই-টিন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ জমা দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে। টাকার পরিমাণ এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন তাদেরও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও ই-টিন সনদ জমা দিতে হবে। এ উদ্যোগের ফলে সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরাই আসবে। একই সঙ্গে কালো টাকা বিনিয়োগকারীদের চিহ্নিত করা যাবে।
সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ এতটাই বেড়ে গেছে যে, বর্তমানে বছরে এ ঋণের সুদবাবদ সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বছরে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তার থেকেও এ ব্যয় ১ হাজার কোটি টাকা বেশি। তাই শিগগিরই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের লাগাম টানতে চায় সরকার। এ জন্য এ খাতে বিনিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।
এমইউএইচ/এসআর/এমএস
Advertisement