দেশজুড়ে

সাত দিনের মধ্যে করতোয়া দখলমুক্ত করার নির্দেশ

বগুড়ায় করতোয়া নদীর অবৈধ স্থাপনা আগামী সাতদিনের মধ্যে সরিয়ে নিতে দখলদারদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। পৌরসভাসহ ৩০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে এ নোটিশ পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আলীমূন রাজীব জানান, প্রথম পর্যায়ে ৩০ জনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এটি ছাড়াও করতোয়া নদী দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে নোটিশ অনুসারে স্থাপনা না সরালে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

জেলা প্রশাসনের ভূমি শাখা থেকে গত সোমবার পাঠানো এই নোটিশে সাত দিনের মধ্যে নদীর সীমানা থেকে অবৈধ স্থাপনা নিজ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিতে বলা হয়। বেঁধে দেয়া সময়ের পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সেসব স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়া হবে।

সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারা বগুড়া শহর ও শহরতলির বিভিন্ন অংশে করতোয়া নদী দখলকারী ৩৮ জনের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছিল। এই তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি তোলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) বেশ কিছু সংগঠন।

Advertisement

প্রতিবেদনে করতোয়া নদীর তিনটি অংশে দখলের কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ-সংলগ্ন মহিষাবান মৌজায় প্রায় ১৫ বিঘা আয়তনের নদীর জায়গা অবৈধ ভাবে দখল ও মাটি ভরাট করে ছাত্রাবাস ও ক্যান্টিন নির্মাণ এবং নদীর জায়গা পুকুর হিসেবে ব্যবহার করার কথাও উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে টিএমএসএস মহিলা মার্কেটের পূর্ব পাশে সূত্রাপুর মৌজার করতোয়ার নদীর পশ্চিম তীর ভরাট করে টিএমএসএস অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে।

করতোয়া নদী ১১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বগুড়া শহরের ভেতরে দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ আড়াআড়ি ভাবে প্রবাহিত। আগে মূল করতোয়া নদীর সঙ্গে করতোয়ার সরাসরি সংযোগ ছিল। এখন উৎসমুখে জলকপাটের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে করতোয়ার পানিপ্রবাহ।

পরিবেশবাদী ও নদী বিষেজ্ঞরা বলেছেন, করতোয়ার অবস্থা খুবই নাজুক। উৎসমুখে জলকপাটের কারণে নদীটি অনেক আগেই নাব্য হারিয়েছে। এখন পাল্লা দিয়ে চলছে নদীর জায়গা দখল ও পানিদূষণ।

Advertisement

সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তমাল হোসেন বলেন, টিএমএসএসের বিরুদ্ধে করতোয়া নদীর একাধিক স্থান দখল, ভরাট ও নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার প্রমাণ মিলেছে। এরমধ্যে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের পেছনে মহিষাবান মৌজায় ৪ দশমিক ৯০ একর নদীর জায়গা দখল করে ছাত্রাবাস, ক্যানটিনসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের প্রমাণ মিলেছে।

তবে টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, সরকারের কাছে থেকে ইজারা নিয়ে করতোয়া নদীপারের জায়গায় তিনি টিএমএসএস ছাত্রাবাস ও ক্যান্টিন নির্মাণ করেছেন। নদীর প্রাণ ফিরিয়ে দিতেই পরিকল্পিত ভাবে বালু তোলা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক আশরাফুজ্জামান বলেন, বিসিএল পেপার মিলের ইটিপি বন্ধ রেখে বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে ফেলা হলে তদন্ত করে টিএমএসএসের বিরুদ্ধে মালতিনগর ভাটকান্দি সেতু-সংলগ্ন এলাকায় নদী দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ ও পানির পাম্প স্থাপন এবং কালেক্টরেট স্কুল-সংলগ্ন স্থানে নদীর জায়গা ভরাট করে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের কথা উল্লেখ রয়েছে।

পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান বলেন, নদীপারের জায়গা খালি ছিল বলে সেখানে স্থপনা নির্মাণ করেছে পৌরসভা। প্রশাসনের নোটিশ পেলে অবৈধ স্থপনা সরিয়ে নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, নদী কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক নদী দখলদারের তালিকা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

লিমন বাসার/এফএ/জেআইএম