দেশজুড়ে

সেই গাইনি প্রধানের অবহেলায় এবার প্রসূতির মৃত্যু

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩১ নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহান হক এবং ইনচার্জ জোৎস্না বেগমকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল।

Advertisement

গঠন করা হয়েছিল তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধানের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় খুরশিদ জাহান হকসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার দুপুরে এ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক মানিককে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।

কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের প্রধান ডা. এসএম সরোয়ার এবং অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক মনিরুজ্জামান শাহিন।

Advertisement

হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, বুধবার সকাল ৯টার দিকে মনি আক্তার (৩১) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গাইনি বিভাগের প্রধান খুরশিদ জাহান হকসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সদের দায়ী করেন মৃতের স্বজনরা। মৃতের স্বজনদের বিক্ষোভে হাসপাতালে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনা তদন্তে হাসপাতাল পরিচালক তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন।

মৃত প্রসূতির স্বামী মো. সবুজ হাওলাদার অভিযোগ করেন, প্রসবব্যথা শুরু হলে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে মনি আক্তারকে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় তার অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছিল। এ জন্য বারবার চিকিৎসকের কাছে গেলেও বিষয়টির গুরুত্ব দেননি তারা। ওই সময় চিকিৎসকরা বলেন রক্তের প্রয়োজন। রক্ত জোগাড় হলে অস্ত্রোপচার করা হবে। রাতেই রক্ত জোগাড় করা হয়। এরপরও মনি আক্তারকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়নি। চিকিৎসকের অবহেলার একপর্যায়ে সকালে মনি আক্তারের মৃত্যু হয়।

তবে অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে গাইনি বিভাগের প্রধান খুরশিদ জাহান বলেন, হাসপাতালে ভর্তির আগেই প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। রোগীর স্বজনদের রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়েছিল। তারা সময় মতো রক্ত আনতে পারেননি। এ কারণে অপারেশন থিয়েটারে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন বলেন, প্রসূতির মৃত্যুতে চিকিৎসকের অবহেলা ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তিনদিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩১ নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালের গাইনি বিভাগ থেকে মরদেহগুলো ফেলা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে শত শত মানুষ ডাস্টবিনের সামনে ভিড় জমান।

এ ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এরপর দায়িত্বে অবহেলার কারণে গাইনি বিভাগের প্রধান খুরশিদ জাহান এবং ওই বিভাগের ওয়ার্ড ইনচার্জ জোৎস্না বেগমকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য আবেদন পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরে। ঘটনা তদন্তে পরদিন সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জহুরুল হক মানিককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরই মধ্যে ঘটল প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা।

সাইফ আমীন/এএম/এমএস