রাজনীতি

বঙ্গবন্ধু হত্যা বিতর্কে বেকায়দায় জাসদ

স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনীতি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ৪০ বছরের পুরানো বিতর্কে নতুন করে চাপে পড়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।সম্প্রতি ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রধান শরীক দল আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জাসদের অস্থির রাজনীতিকে দায়ি করে বক্তব্য দেন।বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রসঙ্গে দলটির প্রধান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিভিন্ন সময় কড়া মন্তব্য করে বিরোধীজোটকে ঘায়েল করে আসলেও এবারে নিজ জোটের মধ্য থেকেই বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে তাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সময় হাসানুল হক ইনুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী জোটের প্রধান দল বিএনপিও।কাফফারা (খেসারত) দেয়ার কথা বলে মহাজোট যোগ দেয়ার কথা বললেও সম্প্রতি একাত্তর পরবর্তী জাসদের সৃষ্টি এবং ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তোলায় এমন বেকায়দায় পড়েছে দলটি।‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ জাসদ পরিষ্কার করেছিল’ বলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্যের দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাসদ বিবৃতি দিলে রাজনীতিতে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং জাসদ বিতর্ক নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘খুনিরা কোনো না কোনো সুযোগ ব্যবহার করেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল এটি যেমন সত্য, তেমনি জাসদ ওই সময় রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল এটিও সত্য।’রোববার সন্ধ্যায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বঙ্গবন্ধুর হত্যার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল।ওই সভায় তিনি আরো বলেন, এই জাসদ গণবাহিনী বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। সুতরাং বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা জড়িত ছিল, তা জানতে হবে।এর পরের দিন সোমবার তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বঙ্গবন্ধু হত্যার সময়ে তার ভূমিকা ‘স্পষ্ট করতে’ বলে বিএনপি। অন্যথায় সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করে দলটি। একই দিন জাসদের পক্ষ থেকে ওই সব বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম আর বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন যখন একই ভাষায়, একই সময়ে জাসদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এ অভিন্ন ভাষার যোগসূত্র কী?বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শেখ সেলিম যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু সত্যের অপলাপই নয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে জনগণ ও ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর খুনি গোষ্ঠীর ও খুনের সুফলভোগী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করছে, তখন শেখ সেলিমের এ বক্তব্য ঐক্যের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং শত্রুপক্ষের হাতকে শক্তিশালী করবে।অপরদিকে জাসদের দেয়া এমন বিবৃতির পরের দিন মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ আরেক আলোচনা সভায় জাসদের বক্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্য ও দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন।এর আগের দিন রোববার শোক দিবসের অন্য এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছিল, কথিত সেই বিপ্লবীদের কথা আমরা ভুলিনি’ বলে মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, পঁচাত্তরের আগের ইতিহাস সবারই জানা। আমরাও তখন বিরোধী দলে ছিলাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলেই বিরোধিতা করেছি। কিন্তু জাসদ বিরোধিতা করেছে ‘শেখ মুজিব’ বলে। বঙ্গবন্ধু সরকারের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে জাসদ অস্থির পরিবেশ তৈরি করেছিল, এটি তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে ইতিহাসে দাঁড়িয়ে থাকলে সমাজের অগ্রগতি হয় না। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের যে আদর্শিক কারণে জোট হয়েছে, সেটাও আমলে নিতে হবে।এএসএস/এসকেডি/এআরএস/এমএস

Advertisement