আইন-আদালত

আদালতে খালেদা জিয়া

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে অবস্থিত ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে তাকে হাজির করা হয়।

Advertisement

আজ গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে হাজিরা দেয়ার জন্য সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আলিয়া মাদরাসা মাঠ আদালতে হাজির করা হয়। সেদিন গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল।

শুনানিতে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াসহ মামলার সব আসামি গ্যাটকোকে অবৈভাবে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য অর্থ আত্মসাত করেন। এতে রাষ্ট্রের ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি প্রমাণ করার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট আলামত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। এর ভিত্তিতে আমরা আশা করছি, আসামিদের শাস্তির আওতায় আনতে পারব। তাই খালেদাসহ সব আসামির বিরুদ্ধে ২৯৪৭ সালে দুদকের ৫ এর ২ ধারা ও দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯ ধারায় তাদের অভিযোগ গঠনের আবেদন করছি।’

Advertisement

রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ গঠন শুনানি শেষে আসামিপক্ষের অভিযোগ গঠনের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী চারদলীয় জোট সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেন।

Advertisement

পরে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনে অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো। এর তিনদিন পর খালেদা জিয়া ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।

এরপর দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাইকোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং মামলাটি কেন বাতিলের নির্দেশ দেয়া হবে না-এ মর্মে রুল জারি করেন।

মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ৬ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এম কে আনোয়ার, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।

অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি দলীয় সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আপিলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড বেড়ে ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতে ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত ঢাকা সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

জেএ/এনডিএস/জেআইএম