রুবেল হোসেনের মতই বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার আগমন। পেসার হান্টিং থেকে রুবেলকে যেভাবে বের করে আনা হয়েছিল, ইবাদত হোসেনকেও সেভাবে বের করে আনা হয়। কিন্তু বের হয়ে আসলে কি হবে, গত আড়াই-তিন বছর ধরে তাকে কেবল তৈরিই করা লাগতেছে। এখনও পর্যন্ত কোনো ফরম্যাটেই জাতীয় দলের ক্যাপ তার মাথায় ওঠেনি।
Advertisement
সর্বশেষ বিপিএলে দারুণ বোলিং করেছেন। খেলেছেন সিলেট সিক্সার্সের হয়ে। যদিও দলকে তুলতে পারেননি শেষ চারে। তবুও ইবাদতের বোলিং ভালো লেগেছে নির্বাচকদের। যে কারণে সুযোগ মিলেছে নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট দলে।
বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ কিংবা এইচপি কোচ চম্পকা রামানায়েকে ইতিমধ্যেই সার্টিফিকেট দিয়েছেন, টেস্টের জন্য দারুণ উপযোগি ইবাদত। এ কারণে, হ্যামিল্টন টেস্টের আগে তার প্রত্যাশার বেলুনটাও ফুলে উঠেছে বেশ। এবার কি তবে সাদা পোষাকে সবুজ ক্যাপটা উঠতে যাচ্ছে তার মাথায়!
প্রায় সোয়া দুই বছর আগেই জাতীয় দলের অগ্রগামী হিসেবে নিউজিল্যান্ড এসেছিলেন ইবাদত হোসেন। সেবার ছিলেন স্রেফ শিক্ষানবীশ। এবার আর অগ্রগামী নয়, এলেন জাতীয় দলের সঙ্গেই। গত কয়েকদিন ধরে ক্রাইস্টচার্চে তুমুল প্র্যাকটিস করে গেলেন। হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে এসেও ঘাম ঝরানো অন্য যে কারও চেয়ে বেশি ইবাদতের।
Advertisement
কোচ স্টিভ রোডস তাই তার বুক পকেটে লুকানো গোপন তালিকায় নাম লিখে রাখলেও রাখতে পারেন ইবাদতের। কোচের যে সুদৃষ্টিতে রয়েছেন তিনি! নিজেই আজ বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সে কথা জানালেন ইবাদত। কথা বলার শুরুতেই এমন একটি দারুণ সুযোগ পাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানালেন তিনি আল্লাহকে। এরপর ধন্যবাদ দিলেন বোর্ড ও নির্বাচকদের। এরপর শুরু করলেন মূল কথা, ‘নির্বাচকেরা আমার ওপরে বিশ্বাস রেখেছেন এবং আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো নিউজিল্যান্ডে নিয়ে এসেছে। আমরা টেস্টের অনেক দিন আগে এই জায়গায় এসেছি। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগছে যে বিষয়, এখানে আগে আসার যে কারণটা, এখানকার উইকেট এবং আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেয়া। এই বিষয়টি আসলে কাজে লাগবে।’
ইবাদতের বিশ্বাস, গত কয়েকদিনের অনুশীলনটা বেশ কাজে লাগবে। তিনি বলেন, ‘শেষ যে কয়দিন আমি অনুশীলন করলাম, এই অনুশীলনটা অনেক কাজে দিয়েছে আমার কাছে মনে হয়। কারণ আমি এর আগে ২০১৬ সালে যখন এসেছিলাম তখন উইকেট এবং কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নেয়া আমার জন্য কঠিন ছিলো। এখন আলহামদুলিল্লাহ যে জিনিসটা ভালো হচ্ছে সেটি হলো কিছুদিন থেকে কোর্টনি ওয়ালশ, মারিও বা যারা ছিলো তাদের সাথে কাজ করেছি। ওয়ালশ আমাকে বলেছে, যে তুমি এর আগে এখানে এসেছিলে যেভাবে, এই দুই বছরে তোমার তার থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে।’
ক্রাইস্টচার্চ আর হ্যামিল্টনে টানা অনুশীলনের বিষয়টা উল্লেখ করে ইবাদত বলেন, ‘ভালো লাগছে যে আমরা ছয় সাতদিন যে অনুশীলন করলাম ক্রাইস্টচার্চে, সেখানে একটু উইন্ডি এবং ঠান্ডা ছিলো। এখানে আসলে কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নেয়া বেশ কঠিন। তবে আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। গত দুই দিনে যে ম্যাচ খেললাম সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানেরা অনেক ভালো করেছে। আর বোলাররা ১২ ওভার বোলিং করেছে। আমার কাছে মনে হয় আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে সব দিক থেকে।'
দুই বছর আগের স্মৃতি তুলে এনে বর্তমানের অবস্থাও বর্ণনা করলেন ইবাদত। তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষানবিশ ছিলাম আসলে (দুই বছর আগে)। তখন আমাকে কোর্টনি ওয়ালশ জিজ্ঞেস করেছিলো, তুমি যে এখানে এসেছো, তোমাকে কি কারণে নিয়ে আসা হয়েছে? আমি বলেছিলাম, এখানকার প্রথম কন্ডিশন হলো এখানকার আবহাওয়া এবং উইকেটের সাথে মানিয়ে নেয়া। এখন যখন আমাকে আবারও একই প্রশ্ন করেছে ওয়ালশরা তখন..., আসলে এই দুই বছরের মধ্যে আমি চম্পকা রামানায়েকের সাথে কাজ করেছি এক দেড় বছর।’
Advertisement
বোলিংয়ের যে বিশেষ দিকটা নিয়ে কাজ করেছেন ইবাদত, সেটাও জানালেন তিনি। ইবাদত বলেন, ‘বিশেষ করে আমি কাজ করেছি আমার অ্যাকুরেসি নিয়ে, লাইন এবং লেন্থ নিয়ে। উনি আমাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছিলেন যে, তোমার বোলিং অ্যাকশন ভালো। তুমি লম্বা সময় ধরে বোলিং করতে পারো। তুমি যদি ভালো টেস্ট খেলোয়াড় হতে পারো সেটা আসলে অনেক ভালো হবে। ওনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি, লাল বল নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আমি আসলে কাজ করছিলাম ধারাবাহিকতা এবং লাইন, লেন্থ নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ এই জায়গায় আসার পরে এখন অনেক ভালো বোধ করছি।’
ইবাদত চান একজন ভালোমানের টেস্ট বোলার হতে। এটা তার স্বপ্ন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আসলে একজন ভালো টেস্ট ক্রিকেটার হলে সব খেলা সম্ভব এবং সহজ হয়। আমি চাই ভালো মানের একজন টেস্ট বোলার হতে। আর একটি ব্যাপার হচ্ছে টেস্টে আসলে লম্বা সময় ধরে বল করার সামর্থ্য থাকা এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই দুইটি জায়গায় আমি গত দুই বছর ধরে কাজ করছি। এখন যদি সুযোগ পাই, আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবো এবং বাংলাদেশকে কিছু দেয়ার চেষ্টা করবো।’
মোস্তাফিজের কাছ থেকে টিপস নিয়ে সেটা কাজে লাগানোর ভাবনা কাজ করছে ইবাদতের মধ্যে। তিনি বলেনম ‘আমি এর আগে যখন এসেছিলাম, তখন কামরুল ইসলাম রাব্বি ভাই ছিলো। তাসকিনও ছিলো। ওনারা যখন বোলিং করেছিলো তখন ভালো বোলিংই করেছিলেন, খারাপ হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। আর একটি ব্যাপার হচ্ছে এখন আমি, রাহি, খালেদ এবং সাথে মোস্তাফিজ আছে। মোস্তাফিজের কিন্তু ওয়ানডে, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে অনেক অভিজ্ঞতা আছে। আমি, খালেদ এবং রাহি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কি লেন্থে বল করলে ভালো হবে। সে যেটা বললো, যে উইকেটে নতুন বলের ব্যবহার আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর যত ধারাবাহিকভাবে বল করা যায়। মোস্তাফিজ আরেকটি বিষয় বললো যে, আমরা ওভারে যে ছয়টি বল পাই সেখানে আমরা চারটি বল ধারাবাহিকভাবে করবো আর দুটি বল আমরা চেষ্টা করবো যেন উইকেট টেকিং হয়। এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে। ওর কাছ থেকে আমরা অনেক সাহায্য পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। এখন আমরা প্রথম ম্যাচে ভালো করার চেষ্টা করবো।’
আইএইচএস/এমএস