কৃষি ও প্রকৃতি

জনপ্রিয় হচ্ছে ভাসমান বেডে সবজি চাষ

বৃহত্তর সিলেটসহ সারাদেশের অনেকাংশ হাওরাঞ্চল। এ হাওরাঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। এসব এলাকার বাড়ির আশপাশ, বিল-ঝিলে পানি থাকে। অনেক বাড়ির মজা পুকুর, দীঘিও খালি পড়ে থাকে। এগুলো সাধারণত ফেলে রাখা হয়। পানিতে ডুবে থাকা এসব জায়গায় সবজি চাষের বিপুল সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

মৌলভীবাজারের আকবরপুরে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে সফল হয়েছে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের চাষিরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সফল হয়েছে। ফলে ভাসমান বেডে সবজি চাষ পদ্ধতি হাওরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে গবেষণা কেন্দ্র।

বর্তমানে মৌলভীবাজারের হাইল হাওর, বাইক্কা বিলসহ বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকা এবং নিম্নাঞ্চলে ভাসমান বেডে সবজি চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রথম দিকে চাষিরা সন্দিহান থাকলেও পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা আসায় ‘ভাসমান বেডে সবজি চাষ’ ধারণাটি জনপ্রিয় হচ্ছে।

> আরও পড়ুন- কুমড়া গাছে লাউ ধরে যেভাবে

Advertisement

শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কা বিল ঘুরে দেখা গেছে, বাইক্কা বিলে যাওয়ার পথে একটি বাড়ির কাছে ডোবার মধ্যে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা হয়েছে। পরপর ভাসমান তিনটি ‘বেড’। তাতে বিভিন্ন রকমের সবজি। বাঁশের খুঁটি ও ডালপালা দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। মাচায় সবজির লতাপাতা ছড়িয়ে ঝাড় হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে সড়কে আসতে ডোবার উপর একটি বাঁশের সাঁকো।

সবজি চাষি ফুলমতি বেগম জানান, আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে লোকজন এসে ডোবার মধ্যে ভাসমান বেডে তাদের সবজি চাষ করতে বলেন। এতে তারা ডোবায় তিনটি বেডে সবজি চাষ করেছেন। একটিতে শসা, একটিতে বাংলা লাউ ও একটিতে লাল শাক। এমন সবজি চাষের অভিজ্ঞতা নতুন হওয়ায় ফলন প্রথমবার আশানুরূপ হয়নি। কিছু ফসল পোকায় নষ্ট করেছে। তবে তাদের দেখে প্রতিবেশীও ডোবায় নতুন বেড তৈরি করছেন।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর সিলেটের হাওরাঞ্চলের অনেক জায়গা বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে। ভাসমান বেডে শীত ও বর্ষাকালীন শাক-সবজি চাষ করা সম্ভব। এতে খরচ কম। রোগ-বালাই, পোকা-মাকড়ের উপদ্রবও কম। কীটনাশক ও সার তেমন একটা দিতে হয় না।

> আরও পড়ুন- ফরমালিন প্রতিরোধে লিটনের শখের বাগান

Advertisement

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি বলেন, ‘একটি বেডের দৈর্ঘ হতে পারে ৩০ ফুট (ছোট-বড় হতে পারে)। প্রস্থ সাড়ে চার ফুট। বেডটি তিনটি স্তরে তৈরি করা হয়। এরমধ্যে উপরের স্তরের পাঁচ ইঞ্চি টোপাপানা, মাঝের স্তরের তিন ইঞ্চি দুলালীলতা এবং নিচের স্তরে ৩০ ইঞ্চি কচুরিপানা থাকে। এসব উপকরণ হাওরাঞ্চলে সহজেই পাওয়া যায়। যে কোন বীজ গজানোর পর বেডে এনে রোপণ করা হয়। একটি বেডে তিন থেকে চারবার লাল শাক, একবার পুঁই শাক এবং এক মৌসুম ঝিঙ্গা, শসা, লাউ, ঢেঁড়শ ও কুমড়া চাষ করা যায়। এক বেডে একবারে এক ফসল থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাওরাঞ্চলের লোকজনকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ‘ভাসমান কৃষি প্রযুক্তি জনপ্রিয়করণ ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় আগ্রহী চাষিদের প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে বেড তৈরি করে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে সাতটি, বাইক্কা বিলে চারটি এবং হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আটটি বেড করা হয়েছে।’

> আরও পড়ুন- অনাবাদী জমিতে আমলকি চাষে সফল আব্দুল হাই

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ করলে চাহিদা মিটিয়ে বিক্রিও করতে পারবে। আমরা এ প্রযুক্তি হাওরাঞ্চলে পৌঁছে দিচ্ছি। এ অঞ্চলে সবজির ঘাটতি আছে। হাওরাঞ্চলে ১২ মাসই পানি থাকে। এ প্রযুক্তিতে একটি বেড তৈরিতে মাত্র তিনটি বাঁশ লাগে। বাকি উপকরণ কচুরিপানা, লতাপাতা হাওরাঞ্চলে এমনিতেই পাওয়া যায়।

এসইউ/পিআর