মতামত

বিমানবন্দরের নিরাপত্তার এই হাল!

যে কোনো দেশের বিমানবন্দর একটি স্পর্শকাতর এলাকা। কাজেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রশ্ন যে অমূলক ছিল না তার প্রমাণ পাওয়া গেল দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায়। তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে কিভাবে ছিনতাইকারী বিমানে উঠলো সেটি এক বড় প্রশ্ন।

Advertisement

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবাইগামী বিজি ১৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে উড়োজাহাজের ভেতর ‘জিম্মিকারী’ ব্যক্তি পিস্তল বের করে দুই রাইন্ড গুলি ছুড়ে। এ সময় যাত্রীরা ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। ‘জিম্মিকারী’ ব্যক্তিটি চিৎকার করে এ সময় বলতে থাকেন, আমার ডিমান্ড ফুলফিল না করে বিমান অবতরণের চেষ্টা করলে বিপদ আছে। সবাইকে নিয়ে মরবেন বলেও তিনি হুমকি দেন।

সাধারণত বিমানবন্দরে প্রবেশের পর থেকে বিমানে আরোহণের আগে একাধিক স্ক্যান মেশিনে নিরাপত্তা তল্লাশির পর বিমানযাত্রীদের বোর্ডিং পাস দেয়া হয়। এমন কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কীভাবে একজন যাত্রী বিমানে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করলো এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। বিকেল পৌনে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিমান ছিনতাইয়ের ওই ঘটনায় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে কাটায় গোটা দেশবাসী। এরই মধ্যে রাত ৭টা ১৭ মিনিটে অপারেশনে নামে কমান্ডো বাহিনী। ৭টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত চলা ওই অভিযানে নিহত হন উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী। ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজটি বোয়িং-৭৩৭ মডেলের। ১৪২ জন যাত্রী ও সাতজন ক্রু নিয়ে বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল।

বিমান ছিনতাইয়ের সফল সমাপ্তি হলেও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেছে এই ঘটনা। নিরাপত্তার প্রশ্নটিই ঘুরেফিরে আসছে। জঙ্গিবাদসহ নানা ধরনের আতঙ্ক ও অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। এই অবস্থায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই হাল এটি ভাবা যায় না। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে মালবাহী বিমান বন্ধ করে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ চলাচলও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানেও ঘটেছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সোনা চোরাচালান, লাগেজ হারানো, লাগেজের ভেতরের মালামাল চুরি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরজন্য কাউকে কোনো জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হয় না। কোনো শাস্তিও হয় না কারো। এজন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনায় আপাতত রক্ষা পাওয়া গেলেও এ নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখতে হবে একে। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এটি যেন আলোর মুখ দেখে। দোষীদের শাস্তি দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক। বিমাবন্দরের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়।

Advertisement

এইচআর/এমকেএইচ