নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাতখুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)। গত দেড় বছরে এ বাহিনী উদ্ধার করেছে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য। এছাড়া গ্রেফতার করেছে অনেক অপরাধীকে। সুকৌশলে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। শুক্রবার র্যাব-১১ এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। র্যাব-১১ সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খানের নেতৃত্বে অনেক অভিযান সফল হয়েছে। গত দেড় বছরে নতুন এটিম ২৯টি বিদেশি পিস্তল, আটটি এলজি, চারটি দেশি বন্দুক, তিনটি রিভলবার, পাঁচটি পাইপগান, ৯৮টি দেশীয় অস্ত্র, ২২৫ রাউন্ড অ্যামুনিশন, ২৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।এছাড়া ৩৫টি ম্যাগজিন, ৯১টি ককটেল, পাঁচটি পেট্রলবোমা, দুই লাখ ১০ হাজার ৬০৩ পিস ইয়াবা, ৮৩০ দশমিক ৭৩২ কেজি গাঁজা, আট হাজার ৬৭৫ বোতল ফেনসিডিল, পাঁচ হাজার ১৪৫ ক্যান বিয়ার, ৬৪৩ গ্রাম হিরোইন, এক হাজার ৩১৮ বোতল বিদেশি মদ, ৩৫ হাজার ৪৯২ দশমিক ৩৭৫ লিটার দেশি মদ উদ্ধার করে। দেড় বছরে র্যাব-১১ অস্ত্রসহ ৮৭ জনকে, মাদক বিক্রির এক কোটি ৩৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩২ টাকাসহ ৮৯২ মাদক বিক্রেতাকে গ্রেফতার করেছে। একই সময়ে ৩২ জন অপহরণকারী এবং বিভিন্ন অপরাধে ১৮৭ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিলগালা করা হয় ভেজাল খাবার তৈরির অনেক কারখানাও। এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) অন্যান্য ইউনিটের ন্যায় ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট গঠিত হয় র্যাব-১১ এর একটি ইউনিট। যার সদর দফতর স্থাপন করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লা ছাড়াও অন্যান্য জেলার অপরাধীদের গ্রেফতার করে আসছিল র্যাব-১১। র্যাব-১১ এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে অনেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীও। র্যাবের অভিযানে অস্ত্র, মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন অপরাধীদের অনেক অবৈধ পণ্যও আটক করেছিল। চারদিকে বেশ সুনামও ছড়িয়ে ছিল র্যাব-১১ এর কার্যক্রমে। কিন্তু হঠাৎ ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল থমকে দাঁড়ায় র্যাব-১১ এর কার্যক্রমে। কারণ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাতজনকে অপহরণ ও ৩০ এপ্রিলে তাদের মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের পর থেকেই কিছুটা থমকে যায় র্যাব-১১ এর কার্যক্রম। নিহত নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাব-১১ এর সিওসহ র্যাব কর্মকর্তারা সাতজনকে অপহরণ করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এরপর থেকেই থমকে যায় র্যাব-১১ এর কার্যক্রম। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ৬ মে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। ১৬ মে র্যাব-১১ এর সাবেক সিও লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, র্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা মেজর (অব.) আরিফ হোসেন এবং ১৭ মে র্যাবের লে. কমান্ডার মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয় র্যাবের অন্যান্য সদস্যদের। এরপর থেকেই র্যাব-১১ এর কার্যক্রম কিছুদিন প্রায় অচল ছিল। র্যাবের হারানো জৌলুস পুনরুদ্ধার করতে ২০১৪ সালের ৯ মে র্যাব-১১ তে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খানকে। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে তিনি র্যাবের পুরনো মোবাইলের সিমগুলো পরিবর্তন করে নতুন নম্বর সংযুক্ত করেন।এরপর সিও লে. কর্নেল আনোয়র লতিফ খান কিছুদিন ছিলেন র্যাব-১১ এর আওতাধীন এলাকাগুলোর গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণে। তারপর থেকেই শুরু হয় র্যাবের কার্যক্রম ও অভিযান। এরপর একের পর এক বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অপহৃতের উদ্ধার, আসামিদের গ্রেফতারসহ নানা অপরাধ দমনে কাজ করছে র্যাব-১১ এর নতুন টিমের সদস্যরা। হোসেন চিশতী সিপলু/এআরএ/বিএ
Advertisement