জাতীয়

‘আমরা জাইন্যা শুইন্যাই মৃত্যুকূপে থাকি’

‘বাপদাদার আমলের বাড়ি, ভাইবোন কেউ ভাগে পাইছে এক কাঠা, কেউ সোয়া কাঠা। এ পরিমাণ জমি লইয়া বাড়ির লাইগ্যা ব্যাংকে লোন লইতে গেলে কয় রাজউকের অনুমোদন লইয়া আহেন। রাজউকে গেলে কয়, বাড়ি করতে অইলে জায়গা ছাড়তে অইবো। এমনিতেই একটু খানি জায়গা, এহান থাইকা জায়গা ছাড়লে বাড়ি করুম ক্যামনে। লোন না পাইয়া কেমিক্যাল ফ্যাক্টরির কাছে বাড়ি ভাড়া দিয়া অ্যাডভ্যান্স লই। জাইন্যা শুইন্যাই মৃত্যুকূপে থাকতে বাধ্য অই।’

Advertisement

আজ (সোমবার) পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার নন্দ কুমার দত্তরোডের বাসার অদূরে বসে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললেন ছেলেহারা এক বৃদ্ধ বাবা।

বুধবারের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে এ বৃদ্ধের ছেলে মো.ওয়াসিউদ্দিনের প্রাণ। লাশটি পুড়ে অঙ্গার হওয়ায় ছেলের মুখটাও শেষবারের মতো দেখতে পারেননি। ছেলের এমন মৃত্যুতে টনক নড়েছে পিতা নাসিরউদ্দিনের।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নাসিরউদ্দিন বলেন, পুরান ঢাকার লাখ লাখ মানুষের অধিকাংশই জেনেশুনে বিষপান করছে অর্থাৎ কেমিক্যালের ঝুঁকি নিয়েই বছরের পর বছর বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর মধ্যে বেশিরভাগের আয়তন ছোট। পৈত্রিক সূত্রেই তারা এক দেড় কাঠা জমি পান। সেগুলোতে বাড়ি করতে গেলে রাজউক নকশা দেয় না, জায়গা ছেড়ে করতে বলে। এ কারণে বাড়িওয়ালারা আট-দশ লাখ ঋণ নিয়ে রাসায়নিক মালামালের ব্যবসায়ীদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেন।

Advertisement

নাসিরউদ্দিন বলেন, পুরান ঢাকায় কোনো কেমিক্যালের ফ্যাক্টরি, গোডাউন কিম্বা দোকান থাকুক সেটা তিনিসহ অনেকেই চান না। তবে তার আগে সরকারকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাতে চকবাজারের নন্দকুমার দত্ত রোড ও চুরিহাট্টা শাহী জামে মসজিদ রোড এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। অগ্নিদগ্ধ ৯ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এমইউ/এনএফ/এমকেএইচ

Advertisement