দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনে সম্পদের প্রতি মানুষের লোভ ও মোহ আজন্ম। এ মোহকে দূরীভূত করার জন্য আল্লাহ তাআলা পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে জান্নাতের বর্ণনার পাশাপাশি জীবনসঙ্গী ও আল্লাহর সন্তুষ্টির বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই মানুষ দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী সম্পদের প্রতি যেন ঝুঁকে না পড়ে।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা আগের আয়াতে সে সব সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন যে সম্পদের প্রতি মানুষের লোভ ও মোহ খুব বেশি। আর দুনিয়ার এসব সম্পদ পরকালের কোনো উপকারেই আসবে না বলেই আল্লাহ তাআলা জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন।
দুনিয়ার মোহময় সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে পরকালের চিরস্থায়ী সুখ লাভের উপায় ও নেয়ামতের বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
আয়াতের অনুবাদ
Advertisement
আয়াতের পরিচয় ও নাজিলের কারণ
সুরা আল-ইমরানের ১৪নং আয়াত নাজিল হওয়ার পর হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি যখন দুনিয়াকে এত আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছ, আর আমরা দুনিয়ার এ সৌন্দর্য দেখে বিস্ময়ে মুগ্ধ। তবে এখন আমাদের কী হবে? তখন এ (সুরা আল-ইমরানের ১৫নং) আয়াত নাজিল হয়।
অর্থাৎ হে রাসুল! আপনি বলে দিন, দুনিয়ার যে সম্পদের কথা আগে বর্ণিত হয়েছে তার চেয়ে উত্তম বস্তুসমূহের কথা আমি তোমাদেরকে বলি আর তাহলো চির শান্তির স্থান জান্নাত ও চিরন্তন মুক্তি।
আর এ জান্নাত তাদেরই জন্যে তৈরি করা হয়েছে, যারা পরহেজগারী তথা আল্লাহকে ভয় করে জীবন-যাপন করবে। আল্লাহর বিধি-নিষেধ পালন করবে।
Advertisement
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জীবনের সব দায়িত্ব পালন করবে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। এ জান্নাত এমন এক উদ্যান, যার নিচে দিয়ে নদী প্রবাহিত।
এ জান্নাতে আল্লাহকে ভয়কারী বান্দারা চিরস্থায়ী হবে। এমন নয় যে তারা জান্নাতে কিছু দিন থাকার পর আবার তা থেকে বেরিয়ে আসবে। বরং তারা জান্নাতেই চিরস্থায়ীভাবে সুখ ও শান্তি ভোগ করতে থাকবে।
দুনিয়ার জীবনের ধন-সম্পদ ও নারীর মোহ যত আকর্ষণীয় এবং মনোরমই হোক না কেন, এর সবই হবে ক্ষনস্থায়ী তথা সীমিত সময়ের জন্য।
যারা আল্লাহকে ভয় করবে তারা চিরস্থায়ী শান্তির স্থান শুধু জান্নাতই পাবে না বরং জান্নাতে পবিত্র স্ত্রী লাভ করবে। এ সব স্ত্রীরা হবে সব ধরণের কলুষতা থেকে মুক্ত।
আরও পড়ুন > নারী ও সম্পদের ভোগ-বিলাস সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশনা
সর্বোপরি এসব তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তিরা সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করবে। হাদিসে পাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি সম্পর্কে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবেন- হে জান্নাতবাসী!
তখন জান্নাতবাসীরা এভাবে জবাব দেবেন- হে আমাদের পরওয়াারদেগার! আমরা তোমার দরবারে উপস্থিত আর সার্বিক কল্যাণ তোমারই হাতে।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, যা কিছু তোমাদের দেয়া হয়েছে তার চেয়ে বাড়তি কিছু তোমাদেরকে দান করবো।জান্নাতবাসীরা আরজ করবে, হে আল্লাহ! এর চেয়ে বাড়তি আর কি হতে পারে?
তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদেরকে আমার সন্তুষ্টি দান করবো। তোমাদের প্রতি কখনো রাগ করবো না।’ এ হলো জান্নাতি ব্যক্তিদের চিরস্থায়ী সুখ-শান্তির ও আল্লাহর সন্তুষ্টি বিবরণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চিরস্থায়ী জান্নাতের সুখ শান্তির পাশাপাশি তার একান্ত সন্তুষ্টি লাভে তাকওয়া অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর