রাজধানীতে নির্ধারিত বাস স্টপেজের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর দৃশ্য প্রতিদিনের। সড়কের সব স্থানে বাস থামানোর কথা নয়, তবুও বাস থামছে, যাত্রী উঠছে, নামছেও। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনা।
Advertisement
রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১৩০টি বাস স্টপেজের মধ্যে যাত্রী ছাউনি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ৭০টি এবং উত্তরের ৬০টি স্থানের তালিকা করা হয়। প্রায় ৩৮টি স্থানে যাত্রী ছাউনি নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি দক্ষিণে আর ১০টি উত্তরে। কিন্তু এসব স্টপেজ ব্যবহার না করে যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী তুলছেন বাসচালকরা। ফলে যাত্রী ছাউনি নির্মাণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য মিলছে না।
রাজধানীর শাহবাগে রয়েছে নির্ধারিত স্টপেজ। সেখানে বাস দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু আগের মোড় থেকেই যাত্রী বোঝাই করে আসে মিরপুর-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস। শাহবাগের নির্দিষ্ট স্টপেজে না দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায়। গাড়ির চালকের নাম এনামুল হক। আলাপকালে তিনি জানান, নির্ধারিত স্থানের আগেই ঠেলাঠেলি করে যাত্রীরা উঠে পড়েছে। যে কারণে যাত্রী ছাউনিতে বাস থামানোর প্রয়োজন হয় না। কারণ বাস তো ভর্তি, ইচ্ছা করলেও তো আর যাত্রী নিতে পারব না।
আরও পড়ুন : রাজধানীতে ৩০টি আধুনিক বাস স্টপেজ হচ্ছে
Advertisement
অপরদিকে, রাজধানীর আজিমপুর এতিমখানা মোড়ের সামনের যাত্রী ছাউনিতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হানুল হক রনি। তিনি বলেন, ‘আসলে কেউ নিয়ম মানতে চান না। বাসচালক, যাত্রী- কেউই নিয়ম মানছেন না। এই যে এখানে (নির্ধারিত স্টপেজ) বাসে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে আছি অনেকক্ষণ ধরে, কিন্তু বাস আগে থেকেই ভর্তি হয়ে আসছে। এখানে তারা আর দাঁড়াচ্ছে না। এখন বাধ্য হয়ে সামনের মোড়ে গিয়ে বাসে উঠতে হবে। যদিও সেটি নির্ধারিত স্টপেজ নয়।’
তিনি আরও বলেন, এসব যাত্রী ছাউনি বা বাস স্টপেজ যারা বানিয়েছেন তারাও নির্ধারিত স্থানে বাস থামানো বাধ্য করতে কোনো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখেননি। তারা যদি সঠিকভাবে মনিটরিং করতেন তাহলে চালক নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামাতে বাধ্য হতেন। যাত্রীরাও নিয়ম মেনে বাসে উঠতো।
আরও পড়ুন : কল্যাণপুরের যাত্রী ছাউনিতে চায়ের দোকান
যততত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে সৃষ্ট যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা মাথায় রেখে রাজধানীতে ৩০টি অত্যাধুনিক বাস স্টপেজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যার মধ্যে ২৮টি চালু হয়েছে। ডিএসসিসির মেগা প্রকল্প ‘অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় নির্মিত এসব অত্যাধুনিক স্টপেজ থেকে যাত্রী ওঠা-নামা, উন্নত ফুটপাত, ওয়াইফাই, টি-স্টল, বিশুদ্ধ খাবার পানি, মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবস্থা রাখার কথা। কিন্তু সরেজমিন যাত্রী ছাউনি ছাড়া অন্য কোনো সেবার ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। এছাড়া যাত্রী বা গাড়িচালকও নির্দিষ্ট স্থান থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো করছেন না। ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না।
Advertisement
আরও পড়ুন : বন্ধ হয়নি সিটিং বাসের ‘চিটিংবাজি’
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব খাদেম বলেন, স্টপেজে বাস থামানো এবং যাত্রীদের ওঠানো-নামানোর নিয়মটি সবার মেনে চলা উচিত। বাস স্টপেজ, যাত্রী ছাউনিতে আমরা যে সেবাগুলো রাখতে চেয়েছিলাম (ওয়াইফাই, টি-স্টল, বিশুদ্ধ খাবার পানি, মোবাইল ফোন চার্জের ব্যবস্থা) সেগুলো রাখতে হলে সবস্থানেই কমপক্ষে ২/১ জন করে লোক দরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল এ মুহূর্তে নেই। তাই আপতত সেবাগুলো রাখা হয়নি। আশা করছি, আগামীতে এসব সেবা পাবেন রাজধানীবাসী।
এএস/এএইচ/এমএআর/এনএফ/এমকেএইচ