পিলখানায় ছেলে লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন ও পুত্রবধূ রশনী ফাতেমা আক্তার লাভলী হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে মরতে চান ১১০ বছর বয়সী মা জুলেখা বেগম।
Advertisement
জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি আজও অতীত স্মৃতি আঁকড়ে ধরে ন্যায় বিচারের প্রহর গুনছেন। শুধু একটাই চাওয়া কখন এ হত্যাকাণ্ডের রায় কার্যকর হবে। তিনি মনে করেন প্রিয়জন হারানোর দৃষ্টান্তমূলক রায় দেবেন আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে বিডিআরের কিছু সংখ্যক বিপথগামী সদস্যের নৃশংসতায় যে ক’জন সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছিলেন লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন তাদের মধ্যে একজন। অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন বিডিআর সপ্তাহের দাওয়াতে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে।
বিডিআর’র নিহত ডিজি শাকিল আহমদ ছিলেন তার ব্যাচম্যাট ও অন্তরঙ্গ বন্ধু। বিডিআর বিদ্রোহের সময় শাকিল আহমদের বাসাতেই স্ত্রী রশনী ফাতেমা আক্তার লাভলীসহ ছিলেন তিনি।
Advertisement
সরেজমিনে লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নিজমেহার গ্রামের পাটোয়ারি বাড়িতে গেলে তার মা জুলেখা বেগম সাংবাদিকদের দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আজ ১০ বছর হলো আমার দেলুকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারি না, খুনিরা আমার ছেলের বউটাকেও মাফ করেনি। আমার নাতনিরা বাবা-মাকে হারিয়ে অনেক কষ্টে আছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আল্লাহর কাছে আমার মিনতি আমি যেন আমার পুত্র ও পুত্রবধূর খুনিদের বিচার দেখে মরতে পারি।
নিহত দম্পতির ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ লেখাপড়া সমাপ্ত করে চট্টগ্রামে স্বামীর সঙ্গে রয়েছেন। ছোট মেয়ে নাজিফা ইশমাম ইংল্যান্ডে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিষ্টনে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন।
নিহতের বড় মেয়ে শারমিন ফাইরুজ মুঠোফোনে জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় আমি লন্ডন কলেজ অব একাউন্টেন্সিতে সিএ অধ্যয়নরত ছিলাম। আমার ছোট বোন নাজিফা ইশমাম ওই সময় চট্টগ্রাম প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। ১০ বছর আগের সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আজও হৃদয়পটে ভেসে উঠে।
তিনি জানান, মানুষের মা কিংবা বাবা বিদায় নিলে একজন হয়তো পাশে থাকে আমরা এমনই দুর্ভাগা যে দুজনকেই একসঙ্গে হারিয়েছি। আজ সবই আছে শুধু মাথার ওপরের সবচেয়ে বড় ছায়া দুটি হারিয়ে গেছে।
Advertisement
এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালতে মামলা বিচারাধীন। আমার বিশ্বাস আমরা ন্যায় বিচার পাবো।
প্রসঙ্গত, শাহরাস্তি উপজেলার ঠাকুর বাজারস্থ নিজমেহার পাটোয়ারি বাড়ির মৃত আলতাফ হোসেন পাটোয়ারির কনিষ্ঠ পুত্র লে. কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন। এলাকাবাসীর কাছে তিনি একজন কৃতি সেনা কর্মকর্তা ও স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে চট্টগ্রামে থাকতেন তিনি।
ইকরাম চৌধুরী/এমএএস/পিআর