জাতীয়

কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ৩ মাসের মধ্যে জায়গার ব্যবস্থা

পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের কারখানা সরাতে আগামী ৩ মাসের মধ্যে জায়গার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

Advertisement

রোববার সচিবালয়ে চকবাজারে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের সভায় কিছু সুপারিশ এসেছে আমরা দেখেছি। ২০১০ সালে নিমতলীর ঘটনার পর যে সুপারিশগুলো এসেছিল, আজকে এর সাথে একটা মিল খুঁজে পেয়েছি। সে জন্য আমরা জোর দিয়েছি এ সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে। যাতে দেশের আর কোথাও এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা না ঘটে।’

Advertisement

সুপারিশগুলো তুলে ধরে এনামুর রহমান বলেন, জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা সরিয়ে নেয়া, সেগুলো ঢাকা শহরের বাইরে সরকারি খাস জায়গায় প্লট বরাদ্দ দিয়ে সরিয়ে নেয়া; ঢাকা জেলা প্রশাসন মহোদয় কতগুলো জায়াগার কথা বলেছেন। ৫২ একর জমি তার খোঁজে রয়েছে, সেটা তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে তা বরাদ্দ দেয়ার জন্য কাজ করবেন। এটা কেরানীগঞ্জে।’

কোনো সময় বেধে দেয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে জায়গার ব্যবস্থাটা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন থেকে সাজেশন আসছে অনুমোদনহীন যে কেমিক্যাল কারখানাগুলো আছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার। অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিতের বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে।’

রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রির জন্য লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে তদারকি প্রক্রিয়া জোরদার করতে বলা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় রাসায়নিক বা বিস্ফোরক দ্রব্য বিক্রয় বা মজুদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত আগুন নিভানোর জন্য স্থানীয়ভাবে পানির লাইনসহ হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় যে পুকুরগুলো আছে এর পুনঃখননের মাধ্যমে পানির রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফায়ার সার্ভিস এবার পানি পেতে কষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে। এজন্য প্রত্যেক এলাকায় একটি রিজার্ভ পুকুরের জন্য এখানে সাজেশন এসেছে।’

দুর্ঘটনা মোকাবেলায় বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিকায়ন করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের জন্য আরও এক হাজার কোটি টাকার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্প গ্রহণ করেছি।’

এর আগেও কেমিক্যাল কারখানা সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এনামুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অনীহাই মূল কারণ ছিল।’

ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

সচিব আরও বলেন, ‘এটা কারো একার কাজ নয়। অনেকগুলো মিনিস্ট্রির কাজ। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে আসছে। তারা আজকে বলেছে ৩ মাসের মধ্যে জমির ব্যবস্থা করা হবে।’

অবৈধভাবে যারা কেমিক্যালের ব্যবসা করছে তাদের কী হবে- এ বিষয়ে সচিব বলেন, ‘সেটা বলা হয়েছে উচ্ছেদ করার। এটা সিটি কর্পোরেশন করবে। জেলা প্রশাসকের সহায়তা নিয়ে তারা এটা করবে।’

কবে থেকে এটা হবে- জানতে চাইলে শাহ কামাল বলেন, ‘এটা তো আজকে থেকে শুরু হচ্ছে। এটা ইমিডিয়েট, আর তো সময় নেই।’

নিমতলীর ঘটনার পর সুপারিশগুলো কেন বাস্তবায়িত হলো না- জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, ‘এখানে যারা এসেছেন এটা তো কন্টিনিউয়াস প্রসেস। কারণ আজকে যারা মিটিংয়ে আসছেন তারা ২০১০ সালে ওই অবস্থানে ছিল না, তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ছিল না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে একটা সমন্বিত রেজাল্ট আসতে সময়ের দরকার। সেই সময় পার হয়ে গেছে এটা বলা যাবে না। বাট এটা অন ট্র্যাক, ট্র্যাকের মাধ্যমেই রেজাল্ট বেরিয়ে আসবে। এটা শেষ মিটিং না আর মিটিং হবে।’

শাহ কামাল আরও বলেন, ‘ছয়টি বিষয়ের আলোকে আজকে আমরা সভা ডেকেছি- ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন একটি কমিটি গঠন করেছে। আমরা এ কমিটিগুলোর অগ্রগতি জেনেছি। এ কমিটিগুলো কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিচ্ছে সেই বিষয়টি জেনেছি সমন্বয় করার জন্য। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে পুরো বিষয়টিকে সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাস্তবে রূপ দেয়া।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মৃতদেহের সংখ্যা হলো ৬৭টি, ৪৮টি মৃতদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেছি। বাকি ১৯টির ডিএনএ নেয়া হয়েছে, সেটাও এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা যাবে।’

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে মনোঃসামাজিক সেবা দেয়া হবে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব বলেন, ‘যারা বেঁচে গেলেন তাদের যে ট্রমা হলো, সেটা থেকে বের করে আনার জন্য আমাদের টিম কাজ করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য যে পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন সেক্ষেত্রে সমন্বিত প্রচেষ্টা নিতে হবে আমরা সেই বিষয়েও আলোচনা করেছি।’

আরএমএম/এনডিএস/পিআর