মায়ের সঙ্গে বাবাকে খুঁজতে হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটছে সিএনজি চালক ইব্রাহীমের শিশু সন্তান বৃষ্টি। পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে গত বুধবার (২০ ফেব্রুযারি) রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন ইব্রাহীম।
Advertisement
চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবারই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাহলে ছুটে আসেন ইব্রাহীমের স্ত্রী রোকসানা। কিন্তু স্বামীর কোনো সন্ধান না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল থেকে ছুটে যান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও স্বামীর কোনো খোঁজ পাননি।
শিশু সন্তান বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে এভাবেই দুইদিন ঢাকা মেডিকেল এবং মিডফোর্ড হাসপাতালে ছুটাছুটি করে শনিবার স্বামীর সন্ধান পেতে ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সামনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কাছে ডিএনএ নমুনা দেন।
কিন্তু তাতেও কোনো ফল না পাওয়ায় রোববার মেয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে আবার ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আসেন রোকসানা। বাবার সন্ধান পেতে মায়ের পর মেয়ে বৃষ্টিও সিআইডি’র কাছে ডিএনএ নমুনা দিয়েছে।
Advertisement
ডিএনএ নমুনা দিয়ে ফেরার পথে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় বৃষ্টি ও তার মা রোকসানার। মা পাশে পাশে থাকলেও তিনদিন ধরে বাবাকে দেখতে না পাওয়া মায়াবি বৃষ্টির মুখ এ সময় দেখা যায় বেশ মলিন। আর পানি ছলছল করছিল তার দুই চোখে।
বাবার কথা শুনতেই কান্নায় যেন বৃষ্টির মুখ আটকে আসছিল। অস্ফূট স্বরে বৃষ্টির মুখ দিয়ে শুধু বেরিয়ে এলো আমি আমার বাবাকে চাই। বাবা কোথায় আছে আপনারা জানেন?
এ সময় পাশে থাকা বৃষ্টির মা রোকসানা বলেন, আমার স্বামী ইব্রাহীম সিএনজি চালান। আমরা কামরাঙ্গীচরে থাকি। আমার স্বামী সিএনজি নিয়ে চকবাজার দিয়ে যাতায়াত করে। বুধবার অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে আমরা তাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। এখানে (ঢাকা মেডিকেল) খুঁজেছি, মিডফোর্ড হাসপাতালে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি।
তিনি বলেন, আমার স্বামীকে খুঁজি পেতে গতকাল আমি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে গিয়েছি। আজ আমার মেয়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে। একজন বললো কিছু মৃতদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এখন সেখানে যাবো। বৃষ্টি সবসময় ওর বাবার কথা শুনতে চাচ্ছে। জানি না কোথায় গেলে বৃষ্টির বাবাকে খুঁজে পাবো।
Advertisement
গত বুধবার রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৪৮ মরদেহ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার বিকেল পর্যন্ত অজ্ঞাত ১৯টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভাব হয়নি।
এসব মরদেহ শনাক্ত করতে ইতোমধ্যে ৩৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এদের মধ্যে শিশু বৃষ্টি ও তার মা রোকসানাও রয়েছেন।
চকবাজারের ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৬৭ জন নিহত হওয়ার পাশাপশি আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪১ জন। এদের মধ্যে দু’জনকে ঢাকা মেডিকেলের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন দগ্ধ ৯ জন। এদের মধ্যে পাঁচজন এখনো শঙ্কার মধ্যে আছেন। এরা হলেন- জাকির (শরীরের ৩৮ শতাংশ পুড়ে গেছে), রেজাউল (শরীরের ৫৭ শতাংশ পুড়ে গেছে), মুজাফ্ফর (শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে), আনোয়ার (শরীরের ২৮ শতাংশ পুড়ে গেছে) এবং সোহাগ (শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে)।
এমএএস/এসএইচএস/পিআর