জাতীয়

‘দায়িত্বে অবহেলাকারীরা ঘুষখোরদের মতো অসৎ’

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, যেসব কর্মকর্তা ঘুষখোর কিংবা দুর্নীতি করেন তারা যেমন অসৎ আবার যারা দায়িত্ব পালন করেন না কিংবা করতে পারেন না তারাও তেমন অসৎ।

Advertisement

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের কর্মকর্তাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত ডকুমেন্ট তথা কাগজ নির্ভর। আবার দুদক আইন অনুসারে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যে কমিশনের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। যে কোনো ব্যক্তিকে অনুসন্ধান বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহ করার জন্য আইনি নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। তদুপরি কেউ এ নির্দেশ পরিপালন না করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় দণ্ড প্রদানের বিধান রয়েছে। এরপরও কেন কমিশনের অনুসন্ধান বা তদন্ত আইন অনুসারে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না। কেন কিছু কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারছেন না? এর দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই নিতে হবে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজে দুর্নীতিমুক্ত এবং আচরণের উৎকর্ষতা না থাকলে কেউ শ্রদ্ধা করে না।

Advertisement

ইকবাল মাহমুদ বলেন, সবাই পদোন্নতি পেতে চায়, কিন্তু দায়িত্ব নিতে চায় না। কমিশন ব্যাপকভাবে পদোন্নতি দিয়েছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এখন সমন্বিতভাবে কাজ করার সময়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিত কাজের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, দুদকের নিজস্ব ক্যান্টিন থাকার পরও কেউ কেউ অন্য হোটেলে খেতে যায়? এর কারণ আমি বুঝি না। ব্যক্তি কখনও অন্য ব্যক্তিকে পরবির্তন করতে পারে না। নিজেই নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। পদ্ধতিগত কারণেই এ দেশে ঘুষ খাওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ। যাদের মান-সম্মানের ভয় নেই তথা কোনো আত্মমর্যাদা নেই তাদের পক্ষে ঘুষ খাওয়া সত্যিই সহজ। এই লজ্জাহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হলে দুদক কর্মকর্তাদের এমনভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে যাতে ঘুষখোরেদের আইনের আওতায় এনে লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। পাশাপাশি পদ্ধতিগত সংস্কারে জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে ২৭টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ শ্রম ও সময় ব্যয় করছি। অসাধারণ জ্ঞান, হোমওয়ার্ক এবং কর্মস্পৃহার সমন্বয় না থাকলে কার্যকর অনুসন্ধান বা তদন্ত করা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। আমরা হাজার হাজার কর্মকর্তাকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণের শিক্ষাগুলো যাতে নিজ নিজ কর্মে প্রতিফলন ঘটে সেগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণে যারা ব্যর্থ তাদের কমিশন আইন অনুযায়ী অন্য সংস্থায় পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে যে পরীক্ষা হবে তার ফলাফল ডোসিয়ারে সংরক্ষণ করা হবে। পদোন্নতির বিদ্যমান নীতিমালা পরিবর্তন করে প্রশিক্ষণের ফলাফল এতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের প্রশাসন অনুবিভাগের মহাপরিচালককে তার এ নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকে অনেক ভালো ভালো কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নির্মোহ থেকে সুনিপুণভাবে মামলার তদন্ত করেন। তাদেরকে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষই শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু যারা ব্যর্থ হচ্ছেন তাদেরকে নিয়ে মানুষে কী ভাবছে, তা ভেবে দেখতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদকরে মহাপরচিালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী। কমিশনের বিভিন্ন পদমর্যাদার ত্রিশ কর্মকর্তা এ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।

Advertisement

এমইউ/এএইচ/পিআর