জাতীয়

পদ্মা সেতু নিয়ে এত কিছু হলো, তাই নামও নদীর নামে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে যখন এতকিছু হয়ে গেছে, এটা পদ্মা সেতু নামেই থাকবে। এটার সঙ্গে আর কোনো নাম যুক্ত হবার প্রয়োজন নাই। সেতুর নাম হবে নদীর নামেই। আমি আর কোনো নাম চাই না, কিছুই চাই না, জীবনে কিছুই আমার চাওয়া-পাওয়ার নেই। আমি সব হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে এসেছি।

Advertisement

রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সৈকতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের বোরিং কার্যক্রম এবং শহরের লালখান বাজার হতে শাহ্ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন শেষে এক সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কর্ণফুলী টানেলের নাম বঙ্গবন্ধু টানেল হিসেবে নামকরণের পেছনের কথা বলতে গিয়ে পদ্মা সেতুর নাম প্রধানমন্ত্রীর নামে করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রসঙ্গে কী কারণে পদ্মা সেতুর নাম নদীর নামেই হবে তার ব্যাখ্যা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সবাই পদ্মা সেতু সম্পর্কে জানেন। আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী পদ্মা সেতুটা আমার নামে করতে চেয়েছিলেন, আমি সেটা নাকচ করে দিয়েছি। তার কারণ হলো- এ সেতুর নির্মাণ নিয়ে আমরা ভিজিবিলিটি স্টাডি করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম ২০০১ সালে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি এই সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। তারা অ্যালাইনম্যান্ট দিয়ে বলে যে এটা এখানে হবে না, এটা অন্য জায়গায় হবে।

Advertisement

২০০৮ সালে সরকার গঠনের আমি সেতুটা নির্মাণের উদ্যোগ নেই। তখন সবাই খুব উৎসাহ দেখায়। বিশ্বব্যাংক, আইডিবিসহ প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এত উৎসাহ দিয়ে মাঝামাঝি সময়ে এসে তারা একটি অভিযোগ আনল এখানে দুর্নীতি হয়েছে। তখনও কোনো টাকা ছাড় হয়নি, কিছু নাই, দুর্নীতিটা হলো কোথায়? যখন এ প্রশ্ন করা হলো তখন উত্তর দিতে পারে না। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম কোথায় দুর্নীতি হয়েছে সেটা প্রমাণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আপনারা শুনলে একটু অবাক হবেন, সাদা কাগজে একটা চিরকুট। এখান থেকে অমুক পাবে এত পারসেন্ট, অমুক এত পারসেন্ট পাবে, এভাবে নানা অপপ্রচার শুরু হয়। তাদের কতগুলো নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসতো, তারা একটা অফিসে বসে বসে অপপ্রচার চালাতো। আমি নাকি বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত লোক, আমার নামে বলতো আমার পুরো পরিবার নাকি দুর্নীতিতে জড়িত। পদ্মাসেতুর টাকা নাকি আমরা লুটে খেয়েছি। তারা টাকাটা দিলো কোথায় যে, লুটে খেল?

আমি এখানে থেমে যাইনি। আমি একটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম তোমাদেরকে এটা প্রমাণ করতে হবে। তোমাদের টাকা নেব না, যদি পারি নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আমাদের পক্ষ থেকে মসিউর রহমানকে বললাম, চিঠি লেখেন। দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে। বারবার চিঠি লেখার পরও তারা উত্তর দিতে পারে নাই।

পদ্মাসেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রে দেশের দুই পত্রিকা সম্পাদক ও এক নোবেল বিজয়ীর সম্পৃক্তা আছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মানুষরাই আমাদের বদনাম করে। দেশের দুইটা পত্রিকার এডিটর আছেন। সঙ্গে আপনাদের চট্টগ্রামের সন্তান আছে সুদের ব্যবসা করে। জনগণের টাকা খেয়ে, সুদখোর আর এডিটর মিলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে সমানে অপপ্রচার করে। এ জন্য পদ্মাসেতুকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আপনারা জানেন কানাডার কোর্টে মামলা হয়। সেই মামলায় এখানে কোনো দুর্নীতি হয়েছে এমন প্রমাণ বিশ্বব্যাংক দেখাতে পারে নাই।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকের ধারণা ছিল বিশ্বব্যাংক ছাড়া পদ্মাসেতু করা সম্ভব না। এ রকম একটা ধারণা নিয়ে তারা চলতো। আর আমার ধারণা ছিল আমরা পারব। আমাদের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও অনেক কথা হয়েছে এটা নিয়ে। তারা বলতো ওকে অ্যারেস্ট করো আমরা টাকা দেব, তমুককে অ্যারেস্ট করো আমরা টাকা দেব। আমি বললাম না, এভাবে হবে না।

পদ্মাসেতু নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে যে কত ঝগড়া করতে হয়েছে, আর কত যে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে সেটা আপনারা বুঝবেন না। যাই হোক আল্লাহর রহমত, আমি মনে করি এটা অবশ্যই আল্লাহর রহমত। সে কারণেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পেরেছি। আজকে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। এই সেতু নিয়ে যখন এত কিছু হয়ে গেছে, এটা পদ্মা নামেই থাকবে। এটার সঙ্গে আর কোনো নাম যুক্ত হবার প্রয়োজন নাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় যখন আমরা বাইরে যেতাম, শুনতাম বাংলাদেশ মানে দুর্ভিক্ষের দেশ। বাংলাদেশ মানে ঘূর্ণিঝড়ের দেশ, জলোচ্ছ্বাসের দেশ। বাংলাদেশ মানেই একটা নেগেটিভ কথা। সেটা খুব কষ্ট লাগতো। সেই দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলব, যেন সারা বিশ্ব বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে- এটাই আমার চাওয়া। আমি কোনো নাম চাই না, কোনো ধন সম্পদও চাই না, কিচ্ছু চাই না। বাংলাদেশের জনগণ মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলবে এটাই আমার চাওয়া। সে কারণেই সবসময় চেষ্টা করি নতুন কিছু করার।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে যোগ দিতে বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান। প্রকল্প দুটি উদ্বোধনের পর মোনাজাত ও দোয়ায় অংশ নেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব আনোয়ারুল ইসলাম। তার স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সুধী সমাবেশের শুরু হয়। পরে বক্তব্য রাখেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ সময় তিন বাহিনীর প্রধানরা, চীনের রাষ্ট্রদূত ও মন্ত্রিপরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আবু আজাদ/এমএমজেড/পিআর