দেশজুড়ে

বেনাপোল দিয়ে ১০ দিনেও কোনো পেঁয়াজ আসেনি

বাজার নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য তিন দফা বাড়িয়ে প্রতি মেট্রিকটন ৭০৫ মার্কিন ডলার করেছে। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি করতে খরচ পড়ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। গত ১৫ দিন আগেও ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৪২৫ মার্কিন ডলারে পেঁয়াজ আমদানি করতেন। হঠাৎ করে দাম বাড়ায় গত ১০ দিনে বেনাপোল বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। এতে করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছুদিন আগে প্রতি কেজি পেয়াঁজের দাম ছিল ২২ থেকে ২৮ টাকা। এখন স্থানীয় বাজারে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে প্রতি কেজি পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আর এ সুযোগে সিন্ডিকেট করে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেননা আগের আমদানি করা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা পূর্ব মূল্যে আমদানি করেছেন।বেনাপোলের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আর এল বিশ্বাস অ্যান্ড কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী শংকর বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন ঊর্ধ্বগতিতে। এ কারণে রফতানি নিরুৎসাহিত করতে ভারত সরকার মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। এখন পেঁয়াজ দেশের বাইরে রফতানি করতে চাইলে ৭০৫ মার্কিন ডলার মূল্যে রফতানি করতে হবে। ভারতের বনগাঁর রফতানিকারক বিবি এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী বিমল বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, আগে তাদের দেশে পেয়াঁজের মূল্য ছিল ৩০ রুপি প্রতি কেজি। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ থেকে ৫০ রুপি হয়েছে। তাই ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা পেয়াঁজ আমদানি করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না।বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জাগো নিউজজকে জানান, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিটন ৪২৫ মার্কিন ডলার মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ওই মূল্যে ভারতীয় বাজারে তারা পেঁয়াজ কিনতে পারেন না। অনেক সময় নির্ধারিত মূল্যের বেশি, আবার কোনো সময় কমও থাকে। এছাড়া,পঁচনশীল পণ্যের হিসেব একটু অন্য ধরনের। এ কারণে মূল্যের তারতম্য হয়। ২৩ আগস্ট পর্যন্ত তাদের হিসাব মতে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি খরচ ছিল ৫৮ টাকা। পাইকারি বাজারে তারা বিক্রি করেছেন ৬০ টাকায়। এখন ৭০৫ মার্কিন ডলারে আমদানি করা পেঁয়াজের খরচ পাড়বে ৬০ টাকা, পাইকারি বাজারে তা বিক্রি করা হবে ৬৫ টাকায় বলে জানান তিনি।যশোরের পেয়াঁজ আমদানিকারক আহমদ এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি তুহিন সাহা জাগো নিউজকে জানান, হঠাৎ ভারতে পেয়াঁজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা পেয়াঁজ আমদানি করছি না। দাম কমে আসলে পরে আবার আমদানি শুরু করা হবে।বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জাগো নিউজকে জানান, ভারতের কৃষিজাত পণ্যের দাম নির্ধারণী সংস্থা (ন্যাফেড) থেকে পেঁয়াজের রফতানি মূল্য ৪২৫ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৭০৫ মার্কিন ডলার করার বিষয়টি ভারতীয় ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন। হঠাৎ করে এই মূল্য বাড়ার ঘোষণায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। কোনো আলোচনা ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অনেক এলসি ওপারে আটকা পড়বে। এতে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়বেন। আমদানি বন্ধ থাকলে পেঁয়াজের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এ নিয়ে ভারত সরকার চলতি বছরে তৃতীয় দফা পেঁয়াজের মূল্য বাড়ালো বলে জানান তিনি।এদিকে, আগের আমদানি করা পেঁয়াজ নিয়ে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পাল্লা দিয়ে অতিরিক্ত মূল্যে তা বাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে আমদানিকারকরা কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। বেনাপোল বাজারে ভারত থেকে আগের আমদানি হওয়া পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টিতে পেঁয়াজ পঁচে নষ্ট হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। ফলে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কয়েকদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল কাস্টমসের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৭ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে কোনো পেয়াঁজ আমদানি হয়নি। এর আগে ১ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে ৩২২ মেট্রিকটন পেয়াঁজ আমদানি হয়েছিলো। ভারতের ব্যবসায়ীরা আমাদের জানিয়েছেন, সে দেশে হঠাৎ পেয়াঁজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা রফতানি করতে পারছে না। মো. জামাল হোসেন/এমজেড/পিআর

Advertisement