জাতীয়

বঙ্গবন্ধু টানেলের ৩২ ভাগ কাজ শেষ, বোরিংয়ের অপেক্ষা

>> কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের খনন শুরু রোববার>> বেলা ১১টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Advertisement

শেষ হতে চলেছে স্বপ্নযাত্রা শুরুর অপেক্ষা। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতের স্পর্শে রোববার থেকে চালু হয়ে যাবে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মূল নির্মাণকাজ।

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শুরু হবে নদীর তলদেশ দিয়ে টানেলের নির্মাণযাত্রা। রোববার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু টানেলের বোরিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানেল নির্মাণের দায়িত্বে থাকা চীনা প্রকৌশলীকে আগামীকালের উদ্বোধন কার্যক্রম সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম

Advertisement

আরও পড়ুন >> যেমন হবে স্বপ্নের টানেল

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় বঙ্গবন্ধু টানেলের বোরিং কার্যক্রম উদ্বোধনের প্রস্তুতিকাজ পরিদর্শন করেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ সালাম ও জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন।

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় বঙ্গবন্ধু টানেলের বোরিং কার্যক্রম উদ্বোধনের প্রস্তুতির কাজ পরিদর্শন

টানেলের মূল বোরিং কাজ শুরুর পূর্বপ্রস্তুতির কথা জানাতে গিয়ে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের সার্বিক কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৩২ শতাংশ কাজ আমরা শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী বোরিং কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করবেন। এরপর মূল টানেল খননের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পদ্মাসেতু নিয়েও কাজ করছি। সেই অভিজ্ঞতায় বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। আশা করছি ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা টানেলের কাজ শেষ করতে পারব।’

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় বঙ্গবন্ধু টানেলের বোরিং কার্যক্রম উদ্বোধনের প্রস্তুতির কাজ পরিদর্শন

সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে একান্তভাবে কথা হয় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে টালেন নির্মাণকাজ খুব সাবলিলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে মূল চ্যালেঞ্জ শুরু হবে আগামীকাল থেকে। নদীর প্রায় ৪০ মিটার কিংবা কোথাও কোথাও আরও নিচ দিয়ে খনন কাজ করবে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম)। ওইখানে কোথাকার পজিশন কী, আমাদের কারও তা জানা নেই।’

আরও পড়ুন >> দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বোরিং মেশিন বাংলাদেশে

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে নদীর দুই পাড়েই আমাদের সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। নদীর পতেঙ্গা পয়েন্টের চাইতে আনোয়ারা অংশে কাজ বেশি হয়েছে। স্বাভাবিক গতিতে কাজ চললে টানেলের প্রথম টিউব তৈরির কাজ শেষে করতে এক বছর সময় লাগবে। বোরিং মেশিনটি মাটি কেটে কেটে পতেঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবেশ করে আনোয়ারা অংশে উঠবে।’

‘এরপর হয়তো মেশিনের কিছু কাজ করা লাগতে পারে। কিছু সময় নিয়ে পরের বছর আবারও আনোয়ারা অংশ দিয়ে নদীর তলদেশে টানেলের দ্বিতীয় টিউবটির খনন কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আশা করছি, আমরা নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শেষ করতে পারব’- যোগ করেন সেতু সচিব।

এদিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় বঙ্গবন্ধু টানেলের বোরিং কার্যক্রম উদ্বোধনের প্রস্তুতির কাজ পরিদর্শন শেষে এ টানেল নির্মাণকে ‘বাংলাদেশের জন্য ইতিহাস সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।

সিটি মেয়র বলেন, ‘এটি শুধু চট্টগ্রামের উন্নয়ন নয়, সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন। কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন। নদীর ওপারে আনোয়ারায় গড়ে উঠবে নতুন শহর।’

মেয়র আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল পর্যন্ত যে ভিশন ঘোষণা করছেন সেই ভিশনের অন্যতম কাজ হলো কর্ণফুলীতে টানেল নির্মাণ। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম এগিয়ে যাবে, চট্টগ্রাম এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে দেশ। টানেল নির্মাণের ফলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাবে। আনোয়ারা এলাকায় গড়ে উঠবে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এছাড়া মিরসরাই থেকে ফেনী পর্যন্ত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজেও গতি আসবে।’

আরও পড়ুন >> স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে চট্টগ্রাম

প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে সিটি মেয়র বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল রোববার বঙ্গবন্ধু টানেলের বোরিং নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে চট্টগ্রাম আসবেন। এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। বেলা ১১টায় বোরিং কাজের উদ্বোধন করবেন তিনি। সাড়ে ১১টায় সমুদ্র সৈকতে একটি সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন। সেই সমাবেশে নির্ধারিত কিছু মেহমান অংশ নিতে পারবেন।’

‘তবে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু এই চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন করেছেন, অনেক মানুষ তাকে ভালোবাসেন, সেহেতু উৎসুক জনতা আশপাশে অবস্থান নিতেই পারেন’- যোগ করেন সিটি মেয়র।

আবু আজাদ/এমএআর/জেআইএম