বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘প্রথমে চকবাজার, এরপর পর্যায়ক্রমে পুরান ঢাকা থেকে সব কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়া হবে।’
Advertisement
শনিবার সকালে চকবাজারের অগ্নিদুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
পুরান ঢাকায় মজুদ সব কেমিক্যাল ও রাসায়নিক পদার্থ দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ো নেয়ার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুরান ঢাকা থেকে অবৈধ সব কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে অবৈধ রাসায়নিক কারখানা সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।’
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ৬৭ জন নিহতের খবর জানায় ঢাকা জেলা প্রশাসন। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪১ জন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
Advertisement
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন, সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাপারে কোনো গাফিলতি, কোনো অবহেলা হয়নি। সরকার সব ধরনের সহযোগিতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। মিসিংদের খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তিনটির মতো তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তের কাজ শেষ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুর্ঘটনার তিনদিনেও কেমিক্যাল গোডাউন সরছে না কেন- জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নির্দেশনা একটাই, ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ কেমিক্যালের যেসব গুদাম রয়েছে, এই অবকাঠামোগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী স্ট্যান্ডিং নির্দেশনা রয়েছে। সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। ধৈর্য ধরতে হবে। এখন এ অবস্থায়, ওই এলাকায় যে অবস্থা বিরাজ করছে সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাময়িক একটা ব্যবস্থা নিলেই এর কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। একটা সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবৈধ রাসায়নিক যে কাঠামো আছে, তা এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে- এ ব্যাপারে কোনো আপস নেই।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এখন কাজটা হলো, যারা নিহত হয়েছেন তাদের লাশটা উদ্ধার করে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া। অনেকে বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এরপরের কাজ হচ্ছে যারা মিসিং, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের খুঁজে বের করা। এ কাজগুলো শেষ হলে অন্যান্য কাজে হাত দিতে হবে।’
Advertisement
২০১০ সালে নীমতলিরর ঘটনার পরও কেন কেমিক্যালের গোডাউন সরানো হলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সমন্বয়ের যতটুকু অভাব ছিল সেই ঘাটতিগুলো পূরণে সরকার আটঘাট বেঁধে নেমেছে। অতীতের ভুলত্রুটির সংশোধন করে নতুন করে যাত্রা শুরু হবে, যাতে এই এলাকা অনিরাপদ রাসায়নিক অবকাঠামোগত নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য যা যা করণীয় তার সমন্বিত পদক্ষেপ নেবে সরকার। আপাতত এই এলাকা বলতে চকবাজার ও আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার রাসায়নিক অবৈধ অবকাঠামো, এগুলোর অপসারণ করতেই হবে।’
কেমিক্যাল গোডাইন সরিয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা সরকার করবে কিনা- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিকল্প চিন্তাভাবনা চলছে। এটি ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকা, এখানে কেমিক্যালের গোডাউন থাকাটা নিরাপদ নয়। এখান থেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়াটাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়বে। সরকারের বিকল্প চিন্তাভাবনা রয়েছে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ।
এআর/জেডএ/এমএআর/আরআইপি