১৯৫২ সালের এই দিনে মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামী জনতা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হননি। বিশ্বের ইতিহাসে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদাদানে রক্তদানের ইতিহাস রয়েছে একমাত্র বাংলাদেশের।
Advertisement
দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রিয়াদ, সৌদি আরব আলোচনা সভা ও শহীদদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাবাসসুম, সোহা সিদ্দিকী ও রেদওয়ানুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোস্তাক আহম্মদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান মিনিস্টার ড. নজরুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ভাইস চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, সিগনেটরি আবদুল হাকিম। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জলিল রাজা, ফারুক হোসেন, সুমন পাটোয়ারি, নাজিম উদ্দীন, মোস্তাক আহমেদ মন্ডল, শহীদ মাতব্বর প্রমুখ।
Advertisement
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন থেকে তিলাওয়াত করে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ইয়াসিন। পরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর অতিথিদের নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সম্পাদনায় রচিত একুশের দেয়ালিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত দেয়াল পত্রিকায় সবাই মুগ্ধ হন। শিক্ষার্থীদের এ ধরনের আয়োজনে সবাই ভূয়সী প্রশংসা করেন। এটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম ও মাতৃভাষাপ্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে অনেকে উল্লেখ করেন। প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আফজাল হোসেন তার স্বাগত বক্তব্যে সভায় উপস্থিতির জন্য সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। ১৯৫২ সালের এইদিনে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বর্তমানে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে বর্তমান সরকারের কৃতিত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পরে রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিফা আহসান, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন এহসানুল রাফিদ আদিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন আমেনা আক্তার তিন্নি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাজিম উদ্দীন ও ফারুক হোসেন ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সুমন পাটোয়ারি তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। জলিল রাজা ভাষা আন্দোলনে শহিদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
পাকিস্তান সরকারের ঘৃণ্য চক্রান্তকে রুখে দিয়ে বীর বাঙালি মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের কথা গর্বের সাথে স্মরণ করেন। মো. আবদুল হাকিম বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছিলো যেন শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চনার জন্য। কিন্তু বীর বাঙালি তাদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে একদিন ভাষার অধিকার এনেছে এবং তার পথ ধরেই আমাদের স্বাধীনতা।
Advertisement
রফিকুল ইসলাম বলেন, মাতৃভাষা ভিন্ন মনের সুক্ষাতিসুক্ষ অনুভূতি প্রকাশের অন্য কোন মাধ্যম নেই। তাই বীর বাঙালি তাদের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে এনেছে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শহীদদের উৎসর্গ করে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবাইকে আন্দোলিত করে। দেশের গান, একুশের গান ও ফৌজিয়া ইয়াসমিন, ফাইজা তাবাসসুম, সুমাইয়া অথৈ, সানা এবং তন্নি এর নৃত্য পরিবেশন সবাইকে মুগ্ধ করে। পরে প্রধান অতিথির মাধ্যমে রচনা প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি ও দেয়ালিকায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
এমআরএম