প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এমন কিছু লোক আছে যারা জনগণ ভালো থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গণতন্ত্র থাকলে তাদের ভালো লাগে না। তখন তারা অনর্গল সরকারের সমালোচনা করতে থাকে। কিন্তু দেশে যদি কোনো মার্শাল ল জারি হয়, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে, তখন তারা খুব শান্তিতে থাকে। কারণ তখন তারা ক্ষমতার বাতাস পায়। সে আশায় তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।’
Advertisement
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ সব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬৭ জনের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন। এ ছাড়াও পুরান ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং আহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। ভাষা আন্দোলনের প্রায় প্রতিটি মিছিলে তিনি অংশ নেন। যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেন তিনি।
Advertisement
বিশ্বের বুকে কেবল বাঙালি জাতিই মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের সব থেকে গৌরবের ভাষার জন্য রক্ত দেয়া। সেই মাতৃভাষার ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র।’
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে জাতিকে নিঃশেষ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, এমনকি এ জাতির অস্তিত্বেই বিশ্বাস করতো না। সে জন্য তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন কোনো উন্নতি-অগ্রযাত্রা হয়নি। আর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলো তখনই দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন হয়েছে। সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি।’ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে যে অত্যাচার-হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা একাত্তর সালের হানাদারদের মতো বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
টানা তিনবারের মতো আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশকে অনেক আগেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতেন।’
Advertisement
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় বাংলা ১৪০০ সাল উদযাপনের জন্য কবি সুফিয়া কামালকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তারা সিদ্ধান্ত নিল ১৪০০ সাল উদযাপন করতে দেবে না। কিন্তু সরকার সেটাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। সব বাধা অতিক্রম করে বাংলার মানুষ ১৪০০ সাল উদযাপন করেছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ট্রাকের মঞ্চ বানিয়ে আমরা লাখ লাখ মানুষকে নিয়ে ১৪০০ সাল উদযাপন করেছিলাম।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মহানগর নেতা একেএম রহমতুল্লাহ, সাদেক খান ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপিকা মেরিনা জাহান কবিতা প্রমুখ।
এফএইচএস/এনডিএস/পিআর