রাজনীতি

কঠোর কর্মসূচি চান ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা

নির্বাচন বাতিল ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দিতে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।

Advertisement

ওই নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত গণশুনানিতে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সকাল ১০টায় সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এই গণশুনানি শুরু হয়। শুরুতেই চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

বিগত সংসদ নির্বাচনে কারচুপির বর্ণনা দিয়ে লালমনিরহাট-৩ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, এই নির্বাচনের ভোট ডাকাতির চিত্র আমার কাছে রয়েছে। ভোটের আগে ছাত্রলীগের এক ছেলে আমাকে ফোন করে বলেছিল, তাদের ১৪ জনকে বাছাই করে ৫০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে ভোট ডাকাতির জন্য।

তিনি বলেন, 'নির্বাচনে ৭টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পরেছে। আমি জানতে চাই যে কেন্দ্রে ভোটার যায়নি সে কেন্দ্রগুলোতে কীভাবে শতভাগ ভোট পরে?

Advertisement

হবিগঞ্জ- ১ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রেজা কিবরিয়া বলেন, আমরা নির্বাচনের আগেই ধারণা করেছিলাম সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হয়তো থাকবে না। নির্বাচনের সময় নিজের বাড়িতে মিটিং শেষে নেতারা যখন ঘর থেকে বের হন সাদা পোশাকধারীরা তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, 'নেতাদের না পেয়ে ১৬ বছরের ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্বাচনের রাতে প্রায় ২০টা ফোন আসে, ভোট তো অর্ধেক হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, মানুষ সরকারকে ভয় পাবে না, সরকার মানুষকে ভয় পাবে-এমন সরকার আমরা চাই।

পাবনা-৪ আসনে অংশ নেয়া ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন,' আমার অনেক কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। তাদের কেন্দ্র থেকে পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর মটর সাইকেলে করে আমার উপর পৈশাচিক হামালা করা হয়। বোমা ফাটিয়ে, গুলি করতে করতে আমার সামনে আসে। তারপর পেছন থেকে একট ছেলে আমাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এই কী হয়েছে, তোমরা এমন করছো কেনো? আমাকে পাবনা জেলার এসপি ও ডিসি সাহেব বললো, আপনার আসনে সীল মারা হবে। আমি বললাম কত পারসেন্ট। তারা বললো ৩৫ পারসেন্ট। আমি বললাম সমস্যা নেই, তবুও আমি জয়ী হব। কিন্তু যখন রাতে সীল মারা শুরু হলো আমি প্রিসাইডিং অফিসারকে এ বিষয়ে জানালাম। তিনি বলেন, না হচ্ছে না।’

Advertisement

 

তিনি শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,'আমি শুধু বলতে চাই, নির্বাচন নিয়ে গগণশুনানি করে কী হবে জানি না? আসুন আমরা এমন কোনো কর্মসূচি দেই, যার মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং রাজপথে জীবন দেব, এর বাইরে কিছু হতে পারে না।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব বলেন, আমার নির্বাচনী আসনে শতাধিক কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারা নির্বাচনী কাজের দায়িত্বে ছিলেন, তারা সবাই মিথ্যাচার করেছে। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কোনো কারণ ছাড়াই মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করে আতংক তৈরি করা হয়েছে। আজকে আমার প্রশ্ন এটা কি রাষ্ট্র আছে, নাকি শুধু ভূখণ্ড। নাগরিকরা ভোট দিতে পারে নাই, তারা অপমানিত হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে বলতে চাই, আমাদের করণীয় কী তা ঠিক করতে হবে।

টাঙ্গাইল ৮-আসনে নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কুড়ি সিদ্দিকী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় সব কয়টা ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র বন্ধ করে ভোটের বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। আমি মনেকরি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমাদের ক্ষতি হয়নি, হয়েছে সরকারের। কারণ তারা মানুষের সামনে চোর হিসেবে ধরা পড়ে গেছে। আমাদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে হবে না ভোট চুরি হয়েছে। কারণ যারা ভোটার তারাই সাক্ষী।

গণশুনানিতে ৭ সদস্যের বিচারক প্যানেলের প্রধান হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তার সঙ্গে আছেন, ঢাবির সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. নুরুল আমিন বেপারী, ড. মহসিন রশীদ, ড. আনিসুর রহমান খান, প্রফেসর দিলারা চৌধুরী ও ড. আসিফ নজরুল।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নুল আবদিন, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. রেজা কিবরিয়া, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার প্রমুখ।

কেএইচ/এমএমজেড/পিআর