জাতীয়

শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় কবি নজরুলকে স্মরণ

তুমি প্রেমের কবি, তুমি ভালবাসার কবি, তুমি দ্রোহের কবি, তুমি সাম্যের কবি, তুমি বিদ্রোহী কবি, তুমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।আজ ১২ ই ভাদ্র ১৪২২। ইংরেজী ২৭ আগস্ট ২০১৫। ১৯৭৬ সালে আজকের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজ তার ৩৯তম প্রয়াণ দিবস।৩৯তম মৃত্যু বার্ষিকীতে জাতীয় কবিকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করেছে পুরো বাঙালি জাতি। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন কবি নাতনি মিষ্টি কাজী।এরপর শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. আবদুস সোবাহান গোলাপের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে বিএনপি নেতারা, ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গনস্থ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ জমায়েত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা নিয়ে কবির মাজারে পুষ্প অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, নজরুল গবেষক ও এমিরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান এবং বাংলা বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর।আলোচনা সভায় সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জাতির জনক, জাতীয় কবি এঁদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য গেজেট প্রকাশ করতে হয় না। কোটি কোটি মানুষ হৃদয় থেকে শ্রদ্ধা করে তাঁদের।তিনি বলেন, নজরুলের প্রতিটি লেখা কোটি মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়। আমরা নজরুলকে সঙ্গে নিয়েই বেড়ে উঠেছি। তার কালজয়ী সৃষ্টিকর্মে মধ্যে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাস তিনি আমাদের সঙ্গে ছায়ার মতো ছিলেন, আছেন আজও।এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, নজরুলের যে সময় লেখালেখি করতেন তার সমসাময়িককালে মানুষেরা তাঁকে ঠিকমতো বুঝতে পারেননি। কিন্তু নজরুল সব সময় প্রাসঙ্গিক ছিলেন।আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, নজরুলের সৃষ্টিকর্ম মানব সভ্যতার সমগ্রতারই অখণ্ড অংশ। এই সৃষ্টি সমগ্রকে সুরক্ষা দিতে হবে। তাই নজরুল চর্চা সম্প্রসারিত করতে হবে। তাঁর চেতনাকে ধারণ করেই বাংলাদেশকে অগ্রগতি, উন্নয়ন ও প্রতির পথে এগিয়ে যেতে হবে।উপাচার্য বলেন, ধর্মকে যারা অপব্যবহার করছে, মানুষের মধ্যে যারা ভেদাভেদ সৃষ্টি করছে তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে নজরুলের মানবিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা নিতে হবে। কবি নজরুলের গান, কবিতা ও বাণী বাঙালি জাতির মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনে ও মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।আলোচকবৃন্দ নজরুলের মানবতাবাদী দর্শন তুলে ধরে বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তার যে অনন্য লেখনী তা আজও প্রাসঙ্গিক। তারা কবির উজ্জীবিত চেতনা বাংলাদেশকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা বলে অভিহিত করেন।অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদুল জামিয়ায় কোরানখানি অনুষ্ঠিত হয়।এদিকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবি নাতনি মিষ্টি কাজী, জাতীয় কবির জন্ম কিংবা মৃত্যুদিবসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তিরাও যাতে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।

Advertisement

এমএইচ/এসকেডি/এমআরআই