আনোয়ার হোসেন। ৫৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি রোজ রিকশা চালিয়ে বাসা কামরাঙ্গীচর ফিরে যান। বুধবার রাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চকবাজার মোড়ে এসে যানজটে আটকে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের ফুলকি এসে গায়ে পড়ে। কোথা থেকে আগুন এল, তা আর জানার উপায় ছিল না। গায়ে লাগা আগুন নেভাতে মাটিতে গড়াগড়ি করতে থাকেন। ততক্ষণে পুড়ে গেছে শরীরের বেশিরভাগ অংশ। রিকশাটিও পুড়ে ছাই। অন্যের সাহায্যে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
Advertisement
ফরিদপুর থেকে এসে কামরাঙ্গীরচরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন আনোয়ার। রাজধানীতে রিকশা চালিয়ে রোজ ফিরে যান কামরাঙ্গীর চরে। স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসারে তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী।
বাবার দগ্ধ শরীর দেখে মন পুড়ে অঙ্গার হয়েছে সন্তানদের। স্ত্রী, সন্তানেরা রাতেই এসেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বার্ন ইউনিটে বাবার সঙ্গে মেয়ে বিথি অবস্থান করছেন রাত থেকেই। অন্যেরা বারান্দায়। অনিদ্রা, অনাহারে মলিন মুখগুলো বাবার খবর জানতে চাতক হয়ে আছেন।
ছলছল চোখ নিয়ে মেয়ে বিথী বলেন, ‘কিছুই বুঝতে পারছি না। ডাক্তাররা বললেন, বাবা বাঁচবেন। এখন আবার আইসিইউতে নিয়ে গেল। বাবার জন্য ভাত রান্না করেছিলাম। সে ভাত এখনও পাতিলে। বাবার কিছু হলে আমরা বাঁচমু না।’
Advertisement
চোখের জল আর বুকফাটা কান্নায় ভারী এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ। হাসপাতাল গেট, বার্ন ইউনিট, মর্গ সব জায়গাতেই আহাজারি। স্বজন হারানো আর্তনাদে কাঁদছে আকাশও।
মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে খবর দিচ্ছিলেন তুহিন নামের এক যুবক। ভাতিজা এনামুল পুড়ে ছাই হয়েছেন চকবাজারের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে। এনামুল ঢাকা সিটি কলেজ থেকে পাস করে রূপালী ইনস্যুরেন্স ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। বাড়ি পটুয়াখালী। দাঁতের ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথেই আগুনে পুড়ে নিহত হন এনামলু।
তুহিন বলেন, ‘রাতভর খুঁজছি। এখন পাইলাম মর্গে। আমার এত সুন্দর ভাতিজার পোড়া লাশ কেমনে করে বাড়ি নিয়া যামু।’
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পেছনের একটি ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে স্থানীয়রা জানান। পরে তা পাশের ভবনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ রাত ৩টার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২০০ কর্মী। এ ঘটনায় ৭০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
Advertisement
এএসএস/এসআর/পিআর